শক্তিশালী গণমাধ্যমের বেহালদশা দূর করা দরকার

চলচ্চিত্র শক্তিশালী গণমাধ্যম হলেও সিনেমা হলের আবেদন বাংলাদেশ থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির ডামাডোলে দর্শকরা সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। শুধু সিনেমাহল থেকেই নয়, অন্দরমহলে রাখা টেলিভিশনেও দেশির বদলে বিদেশি চ্যানেলের কদর বাড়ছে। কেন? প্রতিযোগিতায় টেকার মতো নিজেদের যোগ্য করতে না পারা।

খোদ রাজধানীতে এখন হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা হল চালু আছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দুটি সিনেমাহল বছরে দুবার বাতি জ্বলে। দু ঈদে গ্রামের উঠতি বয়সীদের হলমুখি হতে দেখা যায়। এই সুযোগে দু-পয়সা হলমালিকসহ সিনেমা নির্মাতা আয় করলেও তা যে স্থায়ী নয়, তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনেমা হল বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে নির্মিত হয়। ষাট, সত্তর এবং আশির দশকে এ সিনেমা হলগুলো পুরোদমে সচল ছিলো। পরবর্তী সময়ে নব্বই দশকের শেষদিকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। বেশিরভাগ সিনেমা হল ভেঙে তৈরি করা হচ্ছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ও মার্কেট। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ১৩শ সিনেমা হলের মধ্যে বর্তমানে সংখ্যা কমে ২শটির নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। গত দেড় দশকে দেশের কোথাও নতুন কোনো সিনেমা হল হয়নি। এখন স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট আর পাইরেসির যুগে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যেতে চান না। কারণ তারা আজকের বাংলাদেশি সিনেমা দেখে মজা পান না। আর দর্শক না গেলে ছবির ব্যবসা সফল হয় না। এ যেন দারিদ্র্যের দুষ্টুচক্রের মতোই। ভিডিও পাইরেসির পরিমাণ এতোটাই বেড়েছে যে, নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরদিন থেকেই দর্শকদের হাতে নকল হয়ে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্যাটেলাইট চ্যানেলের বদৌলতে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার প্রবণতাও কমে গেছে। রয়েছে ভালো মানের শিল্পীর অভাবও।

সিনেমা হলের অতীত অবস্থা ফেরানো অসম্ভব হলেও বিলুপ্ত রোধ সম্ভব। আর সেটা দরকার নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার্থেই। সে জন্যই দরকার দক্ষতা বৃদ্ধি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। এই শিল্পকে বাঁচাতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া জরুরি। দরকার মেধাবীদের এ কাজে আকৃষ্ট করার পরিবেশও।