খুলনা বিভাগের অর্ধেক সড়কই বেহাল চরম ভোগান্তিতে ঈদযাত্রীরা

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনা বিভাগের মহাসড়কগুলোর অর্ধেকেই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে এসব সড়কের বেশির ভাগ স্থানে বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর খুলনা জোনের অধীনে ১২৭টি রুটে জাতীয়, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে মোট ২ হাজার ৭৩৪ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ৩৮৫ কিলোমিটার, বাগেরহাটে ৩৯৭ কিলোমিটার, সাতক্ষীরায় ২৫৩ কিলোমিটার, যশোরে ৩৫৬ কিলোমিটার, ঝিনাইদহে ৩৯৮ কিলোমিটার, মাগুরায় ২৫১ কিলোমিটার, নড়াইলে ১৫৩ কিলোমিটার, কুষ্টিয়ায় ২৬১ কিলোমিটার,  চুয়াডাঙ্গায় ১৪১ কিলোমিটার ও মেহেরপুরে ১৩৯ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এসব সড়কের অন্তত শতকরা ৪৫ ভাগ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দের কারণে বেহাল অবস্থা ধারণ করেছে। তবে বেশি বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট ও খুলনা জেলায়। যশোর-খুলনা, রূপসা-বাগেরহাট, খুলনা-মংলা, খুলনা-পাইকগাছা, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের অধিকাংশ  স্থানে টানা বৃষ্টিতে বিটুমিন ও খোয়া সরে যাওয়ায় সড়কগুলোতে চরম খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বার্ষিক বরাদ্দ থেকে ভাঙাচোরা সড়কগুলো মেরামত করে আপাতত যান চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে।

জানা গেছে, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে গত ২৯ আগস্টের মধ্যে সকল সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের ঘোষণা দেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রীর ওই নির্দেশ প্রতিপালনে বর্তমানে খুলনা বিভাগের বেহাল সড়কের খানাখন্দ ও গর্তে ইট ও বিটুমিন দিয়ে কোনোমতে জোড়াতালির মাধ্যমে সড়ক সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু জোড়াতালি দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ ভারী বর্ষণে তা আবার উঠে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। ফলে যানবাহন চলছে অনেকটা হেলেদুলে। দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি বাড়ছে যাতায়াতের সময়ও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রূপসা-মংলা সড়কের দ্বিগরাজ নাভানা কোম্পানি, ফয়লা বিমানবন্দর ও চেয়ারম্যানের মোড়সহ অনেক স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা, খুলনা-যশোর, রূপসা-বাগেরহাট-পিরোজপুর, রূপসা-মংলা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন উঠে ছিটকে পড়ে চষা ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। ওই সব জায়গায় বিটুমিন ও ইট দিয়ে আপাতত মেরামতের চেষ্টা করা হলেও বর্ষার দুই দিন যেতে না যেতেই বিটুমিন উঠে আবার পূর্বের অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। সাইফুল ইসলাম বকতিয়ার, শফিকুল ইসলাম, সৈকতসহ একাধিক যাত্রী জানান, সড়কগুলোর অবস্থা এখন অত্যন্ত ভয়াবহ। যানবাহনগুলো হেলেদুলে চলাচল করছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে খুলনা-চুকনগর সড়ক আগা-গোড়া যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মানুষ নিতান্ত প্রয়োজনেই ওই সড়ক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।

বাসের চালক তুলশী, ওয়াদুদ ও এরশাদ জানান, বেহাল সড়কের কারণে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে অনেক যাত্রী জরুরি কাজ করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন বলেন, ভারী বর্ষণ, বন্যা ও ওভার লোড নিয়ে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়ক-মহাসড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে সকল সড়ক-মহাসড়ক বার্ষিক বারাদ্দের টাকা দিয়ে আপাতত মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, ৩০/৪০ বছরের আগে নির্মাণ, সড়ক-মহাসড়কগুলোর গঠন প্রণালী ভালো না হওয়ায় এবং সড়কগুলোর বাজার সংলগ্ন স্থানে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তাগুলো বৃষ্টি ও ভারী পণ্য বহনকারী গাড়ির চাপে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন এসব মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী রাখতে বিশেষ প্রকল্প নিতে হবে।