জীবননগরে আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ

জীবননগর ব্যুরো: রিচিং আউট অব-স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) ফেইজ-২ প্রকল্পের আওতায় জীবননগর উপজেলা আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর (টিসি) শাহানা পারভীনের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, শিক্ষা উপকরণ, পোশাক ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ক্রয়ের ব্যাপারে বিপুল পরিমাণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের উপকরণ ও পোশাকের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে ওই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের সীমাহীন দুর্নীতির কারনে সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। অনতিবিলম্বে সরজমিনে তদন্তপূর্বক ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে এ প্রকল্পের কার্যক্রম একবারে মুখ থুবড়ে পড়বে। রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) ফেইজ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে জীবননগর উপজেলায় ২০১৩ সালে ৩৫টি আনন্দ স্কুল চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি করে বর্তমানে মোট ৯৫টি আনন্দ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। ওই সকল স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩শ জন। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আনন্দ স্কুল প্রথম পর্যায়ে সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে নানা অভিযোগ ওঠে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার আনন্দ স্কুলে গত জানুয়ারি-জুন মাস পর্যন্ত প্রথম সেমিস্টারের ১ হাজার ৩শ শিক্ষার্থীর জন্য পোশাক তৈরি বাবদ প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। এছাড়াও বিদ্যালয় প্রতি ৬ মাসের ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা, স্কুলঘর মেরামত বাবদ এক হাজার টাকা এবং শিক্ষকের ৬ মাসের বেতন বাবদ ২৪ হাজার টাকা এবং শিক্ষা উপকরণ বাবদ ১ম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী প্রতি ১২০ টাকা করে এবং চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী প্রতি ২০০ টাকা করে স্কুল ভেদে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং পরীক্ষার ফি বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ টাকা করে বরাদ্দ আসে। প্রকল্পের নিয়ম অনুয়ায়ী বরাদ্দের উত্তোলনকৃত টাকা সভাপতি এবং স্কুল শিক্ষক মিলে উত্তোলন করে নিজ দায়িত্বে স্কুলড্রেস, শিক্ষা উপকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করবেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে রক্স ট্রেনিং-কো অর্ডিনেটর শাহানা পারভীন এবং তার সহযোগী প্রকল্পের শিক্ষক ইমরান হোসেন স্থানীয় সোনালী ব্যাংকের দরজায় দাঁড়িয়ে শিক্ষকরা টাকা উত্তোলনের পর পরই স্কুলড্রেসের টাকা ও উপকরণের টাকা শিক্ষিকাদের কাছ থেকে আদায় করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, আমরা কোনো রকমে একটা চাকরি পেয়েছি, শাহানা পারভীনের বিরুদ্ধে কথা বললে চাকরি হারাতে হবে, তাই আমরা কোনো প্রতিবাদ না করে শুধু আমাদের বেতনের টাকা নিয়ে চলে এসেছি। শিক্ষকরা আরো অভিযোগ করেন, অত্যন্ত নিম্নমানের দেশি পলেস্টারের কাপড় দিয়ে তৈরি করা পোশাক টিসি শাহানা পারভীন শিক্ষক ইমরানের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করেছেন। অনেক শিক্ষার্থী তা পরতে পারে না। সূত্রমতে, পোশাক বাবদ ৪০০ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে আনুমানিক ২৪০ টাকা মূল্যের পোশাক দেয়া হয়েছে। আর বাকি ১৬০ টাকা করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অপরদিকে টিসি শিক্ষা উপকরণের বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা থেকে উপজেলা শহরের তোতা কম্পিউটার থেকে ১০ টাকা মূল্যের ৪টি খাতা ও ৪ টাকা মূল্যের একটি কলম শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, নামমাত্র উপকরণের টাকা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন টিসি। এছাড়া পরীক্ষার ফি বাবদ বরাদ্দকৃত ৫০ টাকার মধ্যে ১০ টাকা নামমাত্র খরচ দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, টিসি বিদ্যালয় পরিদর্শন নিয়মিত করেন না এবং তিনি ৮-১০ দিন পর পর অফিসে আসেন যা দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হয়। তিনি কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে অবস্থান করেন যার ফলে বিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। টিসি শাহানা পারভীনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসব অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার ভীত খুব মজবুত। আমার বিরুদ্ধে লাগতে যেয়েন না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, আনন্দ স্কুলের টিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রক্স প্রকল্পের উপপরিচালক মো. শাহাদত হোসেন বলেন, পোশাকের টাকা শিক্ষার্থীদের কাছে দেয়ার কথা এবং উপকরণের টাকা শিক্ষকের কাছে দেয়ার কথা। এ ব্যাপারে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।