আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদীতে গৃহবধূর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন

আসমানখালী প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইলবগাদী গ্রামে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দুর্বৃত্তরা পালাক্রমে ধর্ষণের পর গৃহবধূর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় জোরেসোরে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন। এ সময় তিনি এলাকাবাসীর কাছে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। পরে তিনি পলির ভাবী নাজমা বেগমের সাথে কথা বলেন।

নাজমা বেগম পুলিশ সুপারকে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, মাস পাঁচেক আগে বাদল মোল্লার মেয়ে পলির সাথে একই গ্রামের ওলি ফকিরের ছেলে ইনামুলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পলিকে নিয়ে ইনামুল তার বন্ধু সামাদের বাড়িতে থাকতো। কিন্তু ঘটনার রাতে সামাদের বাড়িতে ১৪-১৫ জন দুর্বত্ত এসে পলি ও ইনামুলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এলাকার পোলতাডাঙ্গার শ্মশান ঘাটে তুলে নিয়ে যায়। পরে ইনামুলকে বেঁধে রেখে পলিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা । কিন্তু পলির চেহারা তো অতোটা ভালো ছিলো না। কিন্তু ওই বাড়িতে সামাদের মেয়েও ছিলো। সে দেখতে খুব সুন্দর। সামাদের মেয়েকে তুলে না নিয়ে গিয়ে দুর্বৃত্তরা কেন পলিকে তুলে নিয়ে গেলো? আর যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা সামাদের মেয়ের মুখে টর্চলাইট মেরে ছিলো। যা সামদের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন স্বীকার করেছেন। নাজমা বেগম বলেন, এটা সম্পূর্ণ পলির স্বামী ইনামুল ও সামাদের পরিবারের সাজানো নাটক। এদিকে পলির বড় বোন লিপিয়া খাতুন পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন, পলির মৃত্যুর দু দিন আগে সে তার বোনের বাড়িতে আসে। তখন তার সামনে সামাদের স্ত্রী ফিরোজা পলিকে বলেন, আর তো দুই দিন বাঁচবি তুই। যা খুশি তোর বোনের সাথে বলেনে। পলির ভাবী জানান, পলির মৃত্যুর আগের দিন আমি পিতার বাড়ি আসমানখালী শালিকা গ্রাম থেকে পলির ভাই মনিরুলের সাথে স্বামীর বাড়িতে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমার ননদ পলির সাথে দেখা করার জন্য সামাদের বাড়িতে গিয়ে পলিকে ডাকলে সামাদের স্ত্রী ফিরোজা পলিকে আসতে দেয়নি এবং অকারণে তাকে গালিগালাজ করে।

নিহত পলির পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীর কাছে ঘটনার বর্ণনা শুনে পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দেন। এ সময় তিনি ভাংবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাওসার আহমেদ বাবলু ও ইউপি সদস্য সাজেদুল ইসলামকে তিন দিনের ভেতর অভিযুক্তদের আত্মসমর্পণ করানোর জন্য নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও আলমডাঙ্গা সার্কেল) তরিকুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) লুৎফুল কবীর, উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান, বড়গাংনী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান ও ভাংবাড়িয়া ইউনিয়ন আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিবর রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট রাতে ১৪-১৫ জন মুখোশধারী দুর্বত্তরা সামাদের বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পলি ও তার স্বামী ইনামুলকে পোলতাডাঙ্গার শ্মশান ঘাটে তুলে নিয়ে যায়। তারা ইনামুলকে বেঁধে রেখে রাতভর পলিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে পলি বিষপানে আত্মহত্যা করে। ওই দিনই পলির পিতা বাদল মোল্লা আলমডাঙ্গা থানায় বাদী হয়ে ইনামুলকে প্রধান আসামি করে আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।