পালনকারীরা ষাঁড় ও খাসির চড়ামূল্য হাকার পরও পরতা হচ্ছে না বলে ছাড়ছে দীর্ঘশ্বাস, আর মূল্য শুনেই ক্রেতাদের উঠছে নাভিশ্বাস। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে পশুহাটগুলোর অধিকাংশেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের এ পরস্থিতি ফুটে উঠছে। কেনা-বেচাও খানিকটা থমকে রয়েছে। পশুহাট যতোটুকু সচল তার পুরো কৃতিত্বই যেন ব্যবসায়ীদের। অপরদিকে ভারতীয় গরু ঢুকছে দেশে। কিছু হাটে জোর জবরদস্তি করে খাজনা আদায়েরও ঘটনা ঘটছে। দেশি-বিদেশি গরু বহন করা ট্রাক-ট্রলি আটকে রাস্তায় চাঁদাবাজিও হচ্ছে অনেকটা প্রকাশ্যে।
এক সময় এক আনায় অনেক কিছু হয়েছে। এখন সেটা অচলই শুধু নয়, নতুনদের কাছে অবিশ্বাস্যই মনে হয়। সময়ের স্রোতে টাকা-কড়ির মূল্যহ্রাস স্বাভাবিক ঘটনা। তাই বলে এক বছরের ব্যবধানে এতো? গরু ছাগল কিনে যারা কোরবানি করবেন বলে এ হাট থেকে ও হাটে ঘুরছেন এ প্রশ্ন মূলত তাদের। গত বছর যে গরুর মূল্য ছিলো ৪৫ থেকে ৫০ হাজার, সেই গরুর মূল্য এবার হাঁকা হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার। এরপরও গরু পালনকারী বা ক্ষুদ্র খামারি শোনাচ্ছেন লাভ না হওয়ার কথা। কারণ গোখাদ্যের মূল্য ভরবছরই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। চড়ামূল্যের গোখাদ্য কিনে খাওয়ানোই শুধু নয়, পরিশ্রমের পাশাপাশি থাকে ঝুঁকিও কম নয়। এরপর যদি ভারতীয় গরুর কারণে এবং ক্রেতাদের মুখ ফেরানোর ধরনে লোকসান হয় তাহলে ঘরে ঘরে গরু হৃষ্টপুষ্ট করার রেওয়াজে শুধু ভাটাই পড়বে না, খামারিরা নিরুৎসাহিত হয়ে গরু পালন থেকে মুখ ফেরাবেন। ফলে গোমাংসের চাহিদা পূরণে স্বনির্ভরতা অর্জনের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই হয়ে থাকবে।
চুয়াডাঙ্গা পশুসম্পদ কর্তার দেয়া তথ্যমতে জেলায় ৫৫ হাজার থেকে ৫৮ হাজার গরু ছাগল কোরবানি করা হয়। আর গরু পালনের সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। সে হিসেবে জেলায় কোরবানির জন্য পশুর প্রচুর ঘাটতি। যদিও গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সরল পরিসংখ্যান ভিন্ন। তাদের অভিমত, ঘরে ঘরে মোটাতাজা করা গরু সংখ্যা জেলায় কোরবানি দেয়া গরুর তুলনায় দ্বিগুণ। বেশি দামে বিক্রির আশায় তার অধিকাংশই রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরের কোরবানির বিশেষ পশুহাটে তোলার জন্য নেয়া হয়। কোরবানির জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রধানত দেশি দেখনায় গরুই বেশি পছন্দ। যদিও নিজের হাতে পালন করা পশু কোরবানি করতে পারলে মহান সৃষ্টি কর্তার সন্তুষ্টি লাভ তথা সোয়াব বেশি, তবু বাস্তবতার আলোকে ৯০ ভাগের বেশি ব্যক্তি বা পরিবার কিনেই গরু কোরবানি করেন। কোরবানির পশুহাটে ভারতীয় গরু কোরবানির জন্য যতোটা না বিক্রি হয় তার চেয়ে ঢের বেশি বিক্রি হয় মাংসের জন্য। ফলে পশুহাটে তার প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গৃহপালিত পশু পালনকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্যেই যেহেতু স্বনির্ভরতা অর্জনের মাহেত্ব লুকিয়ে, সেহেতু লোকসান ঠেকানোর মতো পদক্ষেপ প্রয়োজন। শুধু মূল্য চড়িয়ে নয়, পালনে খরচ কমানোর জন্য খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম কমাতে হবে। বন্ধ করতে হবে চাঁদাবাজি। ভারতীয় গরু আনাও ছাড়তে হবে। যদিও পরদেশি গরু আনা বন্ধ হলে গোমাংসের দাম রাতারাতি আকাশছোঁয়া হওয়ার শঙ্কা, তবুও পরনির্ভরতা পরিহারে খাওয়া কমিয়ে হলেও আমাদের পারতে হবে। কৃচ্ছতা সাধনে বিশ্বের বহু জাতি দাঁড়িয়েছে নিজেদের পায়ে।