ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই সীমাহীন দুর্ভোগ

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যস্ত : সড়ক পথে তীব্র যানজট

স্টাফ রিপোর্টার: সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট এবং রেলপথে যাত্রাসূচির বিপর্যয়ে ঈদযাত্রার প্রথম দিনই ঘরমুখো মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে ঈদ আনন্দ প্রিয়জনদের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়ার খুশিতে সবাই তা হাসিমুখেই মেনে নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমলাপুর স্টেশন থেকে গতকাল সারাদিনে ৬৬টি ট্রেনে ৭০ হাজার যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ও তেজগাঁও স্টেশনের মাঝখানে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় রেললাইন ভেঙে যাওয়ায় কমলাপুর স্টেশন থেকে সময়মতো ছাড়তে পারেনি ট্রেনগুলো। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১৮টি ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে চললেও এরপর আর কোনো ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে যেতে পারেনি। রেললাইনে লাইন ডাউন হওয়ার কারণে নীলসাগর, একতা ও অগ্নিবীনা এক্সপ্রেসের স্টেশন ছাড়তে বিলম্ব হয়। যার ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পরেন ঘরমুখো মানুষ।

গতকাল সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিলো কমলাপুর স্টেশনজুড়ে। প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনগুলো কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে থাকতে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে। আবার বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক ধরনের উৎকণ্ঠা সবার মধ্যে। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের অপেক্ষায় লাইনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেককেই। সড়কপথের ভোগান্তি আর যানজট থেকে বাঁচতে গত ১৮ আগস্ট প্রায় ৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ২৭ আগস্ট গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যেতে ঈশা খাঁ এক্সপ্রেসের চারটি টিকিট কেটেছেন সোলাইমান নামে এক ব্যবসায়ী। সকাল ১০টায় ট্রেনটি ছাড়ার কথা। তাই সাড়ে ৯টার আগেই পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে হাজির হয়েছেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। কিন্তু দুপুর ১টায়ও ছাড়েনি ট্রেনটি। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সড়কের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে কষ্ট করে আগাম টিকিট কেটেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শিশুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এরপরও কোনোমতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে বাড়ি ফিরতে পারলেই খুশি তিনি। তবে ভোগান্তি হলেও প্রিয়জনের মুখ দেখলে সব ভুলে যান বলে জানিয়েছেন জামিয়া আফরিন নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, সাকাল ১০টায় ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিলো। প্রায় ২ ঘণ্টায়ও ছাড়েনি। তবে কষ্ট হলেও অনেক দিন পরে বাড়ি যাওয়াটাই অনেক শান্তির বলে জানান তিনি। দিনাজপুরগামী একতা ট্রেনটি সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়েছে পৌনে ১২টায়। অগ্নিবীনা ট্রেনটি সকাল ৯টায় জামালপুরের তারাকান্দির উদ্দেশে ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়ে গেছে ১১টার পর। নীলসাগর ট্রেনটিও ছেড়েছে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে। এসব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, লাইনে সমস্যা হওয়ায় ট্রেন আসতে দেরি হয়েছে তাই ছেড়ে যেতেও দেরি হয়েছে। বর্তমানে দুই লাইনের পরিবর্তে এক লাইনে ট্রেন চলাচল করছে। এদিকে সড়কপথে তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে।

রাজবাড়ী: পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি পারাপারে দ্বিগুণ সময় লাগায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার বিকেল ৪টার দিকে দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কে এ চিত্র দেখা গেছে। পরিবহন চালক ও যাত্রীরা অভিযোগ করেন, নদীতে তীব্র স্রোত, ফেরি সঙ্কট এবং গরু বোঝাই ট্রাকগুলোকে আগে সিরিয়াল দেয়ার কারণে দৌলতদিয়া প্রান্তে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পারাপারের অপেক্ষায় আটকে থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকায় বাস থেকে নেমে অনেকে হেঁটে ফেরি বা লঞ্চঘাটে যাচ্ছেন।
দৌলতদিয়া বিআইডবিস্নউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) রুহুল আমিন জানান, নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। আগের তুলনায় এখন ফেরিগুলোর নদী পারাপারে দ্বিগুণ সময় লাগছে। তবে নদী পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে থাকা প্রথমে গরু বোঝাই ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস ও কাঁচা মালবাহী ট্রাকগুলো পারপার করা হচ্ছে। বর্তমানে এ রুটে ১৮টি ফেরির মধ্যে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে এবং দুটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে দুটি ফেরি বহরে যুক্ত হয়েছে। আরও ১টি ফেরি যুক্ত হবে। সবগুলো ফেরি ও ঘাট সচল থাকলে ঈদে দৌলতদিয়া প্রান্তে কোনো যাত্রী ভোগান্তি হবে না।
গাজীপুর: শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি আর চার লেনের কাজ চলার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চাপ বেড়ে গাড়ির ধীরগতি এবং থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট ভোগড়া বাইপাস পার হয়ে পূর্ব দিকে মিরেরবাজার ও উলুখোলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ফলে ওই সড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরা।

সালনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হোসেন সরকার জানান, রাতে বৃষ্টির কারণে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকা থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত টাঙ্গাইল মহাসড়কে ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে গাড়িচালকরা সাইডরোড ইউজ না করে সিঙ্গেল লাইনে চলতে গিয়ে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চালাতে পারছে না। এছাড়া ওই মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলতে থাকায় স্থানে স্থানে গাড়ির চাপ বেড়ে গিয়ে গাড়ি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে, মাঝেমধ্যেই যানজট হচ্ছে। তিনি আরও জানান, রাতে বৃষ্টির কারণে মহাসড়কে যানজট বাড়তে থাকে। কিন্তু সকালে রোদ ওঠায় যানজট কমতে শুরু করেছে।
এদিকে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে থেমে থেকে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যানজট নিরসনে সড়কে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে যানবাহনের চালকরা বলছেন, রাস্তায় খানাখন্দ থাকায় স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পারায় গাড়ির সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

Leave a comment