ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও পাল্টায়নি দৃশ্যপট

চুয়াডাঙ্গার ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই ভিক্ষুকদের কথা বলতে অস্বীকৃতি

কামরুজ্জামান বেল্টু/জহির রায়হান সোহাগ: ঘোষণা করা হলেও চুয়াডাঙ্গা কি আদৌ ভিক্ষুকমুক্ত হয়েছে? বড়বাজারের গলি কিংবা নিউ মার্কেটের প্রবেশদ্বারে যেমন ভিক্ষুকের সরব উপস্থিতি, তেমনই জুম্মার নামাজের আগে পরে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানের মূল ফোটকে ভিক্ষুকের ভিড় সেই আগের মতোই। আর সপ্তাহের নির্ধারিত দিনগুলোতে অঞ্চল এলাকাভিত্তিক ভিক্ষুকের ভিড়ের সাথে সাথে মাইক নিয়ে ভিক্ষা করার দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ে। অথচ চার মাস আগে ঘটা করে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা এথন থেকে ভিক্ষুকমুক্ত। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌর পরিষদের সহযোগিতায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ ঘোষণা দেন।

ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণার আগে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠন করা হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের একদিনের বেতন কর্তনসহ নানাভাবে অর্থসংগ্রহ করে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের তোড়জোড় চলে কয়েক মাসজুড়ে। কর্মসূচি বাস্তবায়নকারীদের তরফে বলা হয়, তালিকাভুক্তদের মধ্যে কারো হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ছাগলসহ নগদ টাকা। কেউ কেউ পান দোকান করার স্বল্প পুজিসহ সরঞ্জামাদি। অনেকেরই দেয়া হয় কাজ করে খাওয়ার মতো উপকরণ। চাল গমেরও জোগান দেয়া হয় তখন। এরপরই ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে এখনও ভিক্ষুকদের প্রায় সকলেই সেই পূর্বের পেশায় কেন? এসব প্রশ্নের জবাব জানতে গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের জান্নাতুল মওলা কবরস্থান কবরস্থানের মূল দরজায় সারিবদ্ধ থাকা ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা বলেন, তোমাদের সাথে কথা বললেই তো ওই মেম্বার কমিশনাররা এসে আমাদের পুলিশে দেবে বলে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেবেনে। তোমাদের সাথে কিছু বলবো না। ২২-২৩ জন নারী-পুরুষ ভিক্ষুকের মধ্য থেকে কয়েকজন এ মন্তব্য করার পর অন্যদের কেউই মুখ খুলতে নারাজ। তবে ফার্মপাড়ার বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আশিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুনলাম ভিক্ষুকদের নাম লেখা হচ্ছে। আমিও লেখালাম। আমি যার বাড়ি থাকি সেই মোতালেবও লেখালো। এরপর আমাকে দেয়া হলো ৫টা শাড়ি, ৫টা লুঙ্গি আর ৫টা ব্লাউজ পিস। বলা হলো- এগুলো নিয়ে ব্যবসা করে পেট চালাও। ওইগুলোতে কি ব্যবসা হয়? চুপচাপ বাড়ি নিয়ে ওগুলো ঘরে রেখে আবারও ভিক্ষে শুরু করলাম। আর মোতালেবকে দেয়া হয়েছে ১ বস্তা চাল আর ১ বস্তা আটা। ওতে আর ক’দিন চলে? হকপাড়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গোলাম মোস্তফা (৪৮) বললেন, দু চোখই অন্ধ। আমাকে দেয়া হলো একটা সেলাইমেশিন। ওটা দিয়ে কি আমি সেলাই করতে পারবো? আবার এ কথা বললে ওতা ওটাও পেতাম না। তাই সেটা নিয়ে ঘরে রেখে ভিক্ষাই করতে থাকলাম।

ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণার পরও ভিক্ষাবৃত্তি সেই আগের মতোই কেন? শুধুই কি স্বভাব নাকি সত্যিই অভাবের কারণেই ওদের ভিক্ষা করতে হচ্ছে? চুয়াডাঙ্গার একাধিক পৌর কাউন্সিলের সাথে এ প্রশ্নের জবাব জানতে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের আহ্বানে আমরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চেষ্টা করেছি। যেভাবে তালিকা করেছিলাম, সেভাবে সকলকে পরিপূর্ণভাবে তো আর পুনর্বাসন সম্ভব হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। তবে ভিক্ষা করা যে অন্যায় তা তো ওই ভিক্ষুকদের বোঝানো সম্ভব হয়েছে। ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও ভিক্ষু যে রয়েছে তা অস্বীকার করা না গেলেও অন্তত ভিক্ষুকমুক্ত সমাজগঠনের কাজটা শুরুতো হয়েছে। সমাজ একদিন নিশ্চয় ভিক্ষুকমুক্ত হবে।