বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সকালে স্ত্রী পলির আত্মহত্যা : স্বামীর গাঢাকা

আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদি গ্রামে বিয়ের ৫ মাসের মাথায় স্বামীর ষড়যন্ত্র : রাতে দুর্বৃত্তদের হানা

ঘটনস্থল থেকে ফিরে সাইদুর রহমান ও শাহাদত লাভলু : আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদীর গৃহবধূ পলি খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। স্বামীর প্ররোচনা ও রোষানলে পড়ে পলি বিষপানে বাধ্য হন বলে পুলিশের ধারণা। নিহত পলি খাতুন গ্রামের এনামুল হকের স্ত্রী ও বাদল মোল্লার মেয়ে। আজ পলির লাশের ময়নাতদন্ত হবে। পলির স্বামী প্রচার করেন দুর্বৃত্তদের পাষবিকতার কারণে ঘৃণায় তিনি বিষ পান করেন। তবে ঘটনার পরপরই স্বামী এনামুল গা ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে নানা নাটকীয়তার পর সন্ধ্যায় গ্রামের ফিরোজা নামের এক নারীকে থানায় নেয়া হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইল বগাদী গ্রামের এক সন্তানের জননী পলি খাতুন আগে ছিলেন একই গ্রামের মেছের আলী লাল্টুর স্ত্রী। মাস পাঁচেক আগে তিনি একই গ্রামের ওলি ফকিরের ছেলে দু সন্তানের জনক এনামুল হকের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মাস পাঁচেক আগে স্বামীর ঘর ছেড়ে এনামুলের সাথে বিয়ে করেন তিনি। ঘরে দুই সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে নিজের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন এনামুল হক। বাধ্য হয়ে এনামুল ও পলি খাতুন একই গ্রামের আবদুস সামাদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সামাদ সম্পর্কে এনামুলের বন্ধু। তবে গ্রামের কয়েকজন বলেছেন গ্রামের জহুরুল ইসলাম এবং হাসান জোর করে সামাদের বাড়িতে এনামুল ও পলিকে রেখে যায়।

এদিকে গত বুধবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে ১০-১২ জনের একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত সামাদের বাড়িতে হানা দেয়। তারা সামাদের মেয়ে সাগরী খাতুনের কানের দুল ও একটি মোবাইলফোন কেড়ে নেয়। সাগরী জানান, দুর্বৃত্তরা ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে এবং আমার চোখে টর্চ লাইট মেরে ধরে রাখে। সামাদের স্ত্রী ফিরোজা জানান, দুর্বৃত্তরা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাড়িতে তাণ্ডব চালায়। পরে ঘর থেকে অস্ত্রের মুখে এনামুল ও তার স্ত্রী পলি খাতুনকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। ভোর বেলা তারা ফিরে আসে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফিরে আসার পর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এনামুল জানান, তাদেরকে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূর পোলতাডাঙ্গা শ্মশানঘাটের কাছে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে আমাকে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে স্ত্রীকে অন্যত্র নিয়ে যায়। দু ঘণ্টা পর স্ত্রীসহ তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। এনামুলের দাবি তার স্ত্রী পলিকে ওই দুর্বৃত্তরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে পলি তাকে জানায়। এ মুখ সে আর লজ্জায় কাউকে দেখাবে না বলে সকাল ৮টার দিকে বিষ পান করেন।

এদিকে পলি খাতুনের প্রতিবেশী মহি উদ্দিনের স্ত্রী রূপসী বেগম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে পলি আমার বাড়িতে আসে। রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পলি জানায়, রাতে মাঠের ভেতর নিয়ে দুর্বৃত্তরা তার স্বামীর ওপর নির্যাতন করে। পলি নির্যাতনের দৃশ্য দেখে এক দুর্বৃত্তের পা ধরে মারধর করতে নিষেধ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা শর্ত দেয় যে, পলি যদি পূর্বের স্বামী মেছের আলীর কাছে ফিরে যায় তাহলে আর এনামুলকে মারধর করা হবে না। সে সময় পলি রাজি হয়ে যায়। সকালে প্রতিবেশী রূপসী বেগমের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পলি জানায়, আমি আগের স্বামীর কাছে ফিরে যাবো কোন লজ্জায়? এর কিছুক্ষণ পরই পলি বিষ পান করে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পলিকে পার্শ্ববর্তী আসমানখালীর রিয়া ফার্মেসির পল্লী চিকিৎসক আবদুল হান্নানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আবদুল হান্নান জানান, তিনি পলিকে মৃত অবস্থায় দেখেছেন। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে স্বামী এনামুল গা ঢাকা দিয়েছেন। পলির ভাই শামীম ও চাচা আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন. পলিকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে। এটা তার স্বামী এনামুলের পূর্বপরিকল্পনা। এর সাথে গ্রামের অনেক প্রভাবশালী জড়িত বলে তাদের ধারণা।

পুলিশের ধারণা, সামাদের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা সাজানো নাটক। এনামুল তার স্ত্রীকে রাখবে না এবং তাকে আগের স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিতেই সে কিছু লোককে দুর্বৃত্ত সাজিয়ে ওই রাতে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার নাটক সাজায়। বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) লুৎফুল কবীর ও এসআই জিয়াউর রহমান। পরে সন্ধ্যায় সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শনে যান চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পলির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে মাঠে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে কি-না তা ময়নাতদন্তের আগেই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে নিহত পলির স্বামী এনামুলকে আটক করা গেলেই মূল রহস্য উন্মোচিত হবে। আর যে বাড়ি থেকে এনামুল ও পলিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলে বলা হচ্ছে সেই বাড়ির মালিক সামাদের স্ত্রী ফিরোজাকে থানায় নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আজ শুক্রবার পলির লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।