প্রতারণার পর প্রতারণা : সকলে সচেতন হবে কবে?

বুঝতে পারে না বলেই তো মাছে টোপ গেলে, আর শিকারি সুযোগবুঝে ফঁড়ে বাধিয়ে বড়গুলোকে খানেকক্ষণ খেলিয়ে ডাঙ্গায় তোলে। চুনোপুটিগুলোকে আর খেলাতে হয় না, হ্যাচকা টানেই তা তুলে নেয়া যায় সহজে। দৃশ্যটা মাছ শিকারের হলেও মানুষ হয়ে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় একই কৌশলে। সামনে মেলে ধরে ‘টোপ’। লোভে পড়ে ওই টোপ গিললেই প্রতারকের কেল্লাফতে। যেমনটি হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মালোপাড়ার এক কর্মকার পরিবারের। মূল্যবান সম্পদ ১৩ দিনে ১১ গুন বাড়িয়ে দেয়ার লোভ সামনে মেলে ধরতেই গৃহিণী গোচিয়ে দিয়েছেন তার ঘরে থাকা সব সোনার গয়না। ১০ ভরি ওজনের গয়নাগাটি নিয়ে একটি চারফালি করা আলু আর কিছু কাগজ দিয়ে যখন সটকে পড়েছে দু প্রতারক, তখন ঘোর কেটেছে গৃহকর্তৃর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনই হয়।
না, চুয়াডাঙ্গা মালোপাড়ার কর্মকার পরিবারেই শুধু নয়, এ ধরনের প্রতারণা এর আগেও চুয়াডাঙ্গায় হয়েছে। তবে প্রতারকের কৌশলে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। অভিনবত্ব বলতে যা বোঝায় কর্মকার পরিবারের প্রতারণার বর্ণনায় তেমনটি পাওয়া যায়নি। একজন সম্পর্কে আগে কিছু তথ্য সংগ্রহ করতেই পারে। তার মানে অপরিচিত কেউ বাড়ি প্রবেশ করে অন্দরের অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে দেখে তাকে মাথায় তুলে নাচানো তথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আর দেব দেবি বা কোনো দরগা দরবেশের দিব্যদৃষ্টিতে দেখা সমস্যা সমাধানে আদিষ্ট হয়ে আসা মানেই যে তা মনগড়া গল্প তা বিজ্ঞান যুগে বুঝতে না পারাটাই অজ্ঞতা। প্রতারকরা মূলত এই অজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিশ্বাস স্থাপন করে। প্রথমে বিশ্বাস স্থাপন করার পরই প্রতারক মূল্যবান বস্তু বা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। মোবাইলফোনে জিনের বাদশা সেজে অর্থ হাতানো যে সমাজে সহজ, সেই সমাজ কুসংস্কারে কতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন তা উপলব্ধি করলেই তো গা শিউরে ওঠে। যদিও প্রশ্ন ওঠে, পুলিশ কি করে? প্রতারণা রোধে পুলিশের দায় আছে বটে, তাই বলে ঘরের মধ্যে বসিয়ে জামাই আদরের সাথে মূল্যবান সম্পদ তুলে দেয়াও কি পুলিশকে ঠেকাতে হবে? জবাব যাই হোক, চুয়াডাঙ্গার মালোপাড়ার প্রতারিত পরিবারের হাতে থাকা প্রতারকের ছবি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারক দুজনকে পাকড়াও করা অসম্ভব নয় নিশ্চয়। প্রতারক ধরে হারানো সোনার গয়না উদ্ধারে পুলিশ সক্ষম হলে পুলিশের ওপর আমজনতার আস্থা বাড়বে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশের কাছে এটা আশা করা অবশ্যই অবান্তর নয়।
প্রতারকের মূল অস্ত্রের নাম লোভনীয় টোপ। প্রথমে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ওরা। কোনো কোনো প্রতারক কিছু পদার্থের সাহায্যে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবিও করে। ফু দিয়ে পানিতে আগুন ধরানোর মধ্যে বাহাদুরী নেই যদি তার কাছে ‘সোডিয়াম থাকে। একজন সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এটা যেমন বোঝা সম্ভব নয়, তেমনই পানি বা জলে কোনো কিছুর মিশ্রণ ছাড়া স্বাদে ভিন্নতা আসা অসম্ভব। বিষয়টি বুঝতে এবং বোঝাতে সমাজের সচেতন মানুষগুলোকে বাড়তি দায়িত্ব পালন প্রয়োজন। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেশি হলেও আমাদের সমাজে তার প্রত্যাশিত সুফল মিলছে বলে মনে হয় না। শিক্ষায় ঘাটতি নাকি শিক্ষিত হলেও সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে উদাসীন? কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে এটাও খতিয়ে দেখা দরকার।
পুনশ্চঃ অস্বাভাবিক লোভ পরিহার আর তোষামোদকারীর মতলব বুঝতে ব্যার্থ হলে নির্ঘাত সর্বনাশ।