চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন কোম্পানির শোরুমে বিক্রয় কাজে নিয়োজিতদের আতিথেয়তায় হচ্ছে নিয়ত গড়বড়

কোরবানির ঈদের আগে ফ্রিজের দোকানে ভিড় : ছাড়ের ছড়াছড়ি

শাহাবুদ্দিন রিংকু: ফ্রিজের দোকানে ক্রেতার যেমন হুড়োহুড়ি, তেমনই কোম্পানির তরফেও ছাড়ের ছড়াছড়ি। তবে তার সবই শর্তসাপেক্ষে। কোরবানির ঈদ এলেই ফ্রিজের দোকানে ভিড় বাড়ে। এবারও বেড়েছে। যদিও চুয়াডাঙ্গার ইলেক্ট্রনিক্স দোকানিদের তেমন কেউই এখনও পর্যন্ত সন্তুষ্ট নন। তাদের অনেকেরই অভিমত, রোজার ঈদের তুলনায় এবার কোরবানির ঈদে ফ্রিজ বিক্রির হার ৩০ শতাংশও নয়। যদিও সংশ্লিষ্ট দোকান নির্ভর ভ্যানচালক কিংবা আলমসাধু ড্রাইভারদের অভিমত ভিন্ন। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি।

পবিত্র ঈদ-উল-আজহা আর মাত্র ৭ দিন বাকি। এ ঈদে যতোটা না শাড়ি কাপড়ের দোকানে ভিড় হয় তার চেয়ে অধিক ভিড় হয় ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে। বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদ মানেই ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটর কেনা-বেচার ধুম পড়ে যাওয়া। সে হিসেবে রেফ্রিজারেটর আমদানি ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে এখন গ্রাম্য হাট বাজারেও শো রুম গড়ে তোলা হয়েছে। একই সাথে প্রতিযোগিতায় টেকার জন্য অধিকাংশ কোম্পানিরই মূল্যছাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। দেশের বাজারে যতো আবাসিক যতো বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিক্রি হয় তার সিংহভাগই পড়শি দেশ চায়নায় প্রস্তুতকৃত। শুধু কোম্পানি আর ব্রান্ডের নাম ভিন্ন। কোয়ালিটি কোয়ান্টিটি? যতোটা না সামগ্রীর গুণ, তার চেয়ে এখন ঢের বেশিগুণের অধিকারী বিপনন কেন্দ্রে থাকা বিক্রির কাজে নিয়োজিত নারী পুরুষগুলো। কোনো দোকানে ঢুকলেই ওদের আতিথীয়তা আর চমৎকার উপস্থাপনায় ঘুলিয়ে যায় মাথা। কতো টাকার মধ্যে কোনটি কিনবেন তা স্বামী-স্ত্রী দুজনে ঠিকঠাক করে বাড়ি থেকে বের হলেও দোকানের ওইসব প্রশিক্ষিত কর্মচারীদের ধাঁধানো উপস্থাপনায় সব গড়বড় হয়ে যেতে যেনো বাধ্য। এটার চেয়ে ওটা ভালো, এটার এইগুণ তো ওটার আবার হরেক সুবিধা। সুবিধার লম্বা ফিরিস্তি বগবগ করে আওড়ালেও ওরা মুখে সহজে দাম বলতেই চান না। গুণের কথায় মুগ্ধ করে যখনই বোঝেন মোটামুটি পছন্দ তখনই লেখা মূল্য সামনে ধরেই শুরু করেন কতোটাকার মাল কিনলে কোন কার্ড ঘষে কতোটাকা ছাড় পেতে পারেন। কার্ড ঘষে সম্পূর্ণ মূল্য ছাড়ও পেলে পেতেও পারেন। যদিও এরকম উদাহারণ বিরল। আর কিস্তি? সেও অঙ্কের ধন্দে ধার দেনায় জড়ানো কৌশলে ওরা বেশ পটু। অধিকাংশ ইলেক্ট্রনিক্স দোকানেই এখন প্রায় অভিন্ন চিত্র।

চুয়াডাঙ্গায় কমপক্ষে ১৫টি কোম্পানির শো রুম রয়েছে। এর মধ্যে প্রাপ্ত তথ্য মতে ফ্রিজ  বেচা বিক্রিতে পিছিয়ে নেই কেউ। ওয়াল্টনের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় যেমন মাইওয়ান মিনিস্টারের অঘোষিত প্রতিযোগিতা, তেমনই বেস্ট ইলেক্ট্রনিক্স আর বাটারফ্লাই একই স্থানে ওপর নিচে দোকান হওয়ায় ক্রেতারা দুটিতেই কমবেশি ঢু মেরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ইলেক্ট্রা স্যামসাং, সিঙ্গারের মতো বিদেশি কোম্পানির পাশাপাশি দেশি কোম্পানিগুলোর দাপটও দিন দিন বেড়েই চলেছে।  মিনিস্টার, গোল্ডেন স্টার, যমুনা, ওয়ালটন, মারভেলাসসহ দেশি কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটি গুরুত্ব দিচ্ছে কোয়ালিটির ওপর, কোনোটির গুরুত্ব মূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেয়া। দিন যতো যাচ্ছে ক্রেতা সাধারণের মধ্যেও বাড়ছে সচেতনতা। শুধু ব্রান্ডিং নয়, ওয়ারেন্টিতে কোনো কোম্পানি এগিয়ে তাও দেখে নিচ্ছে কেনার আগে।

গত কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় এবার ফ্রিজ বিক্রির হার দেখতে নেমে রাস্তায় ও দোকানের সামনে ভিড় পরিলক্ষিত হলেও অধিকাংশ বিক্রেতার মুখেই হতাশার অভিন্ন সুর। না হলো না, যেভাবে আশা করেছিলাম সেভাবে হলো না।’ চুয়াডাঙ্গায় শো রুমগুলোর মধ্যে কোনটিতে কতোটাকা থেকে কতোটাকা মূল্যের ফ্রিজ রয়েছে তা জানতে গেলে এলজি বাটার ফ্লাই থেকে বলা হয়েছে, ২২ হাজার থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার টাকার ফ্রিজ রয়েছে। বেস্ট ইলেক্ট্রনিক্সে বিভিন্ন কোম্পানির ফ্রিজ দেখিয়ে বলা হয়েছে, ২৪ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্য পর্যন্ত আমরা শো রুমে রেখেছি। যমুনায় ২১ হাজার ৯শ থেকে ৩৫ হাজার ৮শ টাকা, মাইওয়ান মাইচয়েজে ১৪ হাজার তেকে ৩৫ হাজার টাকা, ইলেক্ট্রা স্যামসাং ১৭ হাজার ৮শ থেকে ৮২ হাজার ৯শ টাকার রয়েছে। ক্রেতা চাইলে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ফ্রিজও এনে দেয়া যাবে। সিঙ্গার শোরুমে পর পর দু দফা গেলেও ম্যানেজার না থাকায় উপস্থিত সহকারীদের কেউ মূল্য তালিকা দিতে রাজি হননি। তবে ক্রেতাদের মনের মতো করে ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর সাজিয়েছে মাইওয়ান মিনিস্টার। সকল প্রকার ক্রেতার চাহিদা পূরণেই প্রস্তুত শোরুম ম্যনেজার। তিনি বলেছেন, সব রকমের ফ্রিজই রয়েছে আমাদের। ২০ হাজার ৯শ থেকে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ফ্রিজ এবার তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর থেকেও কম মূল্যের ফ্রিজ আমাদের শোরুমে পাওয়া যায়। তবে সেগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়নি। এছাড়া অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক দোকানেও রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির ফ্রিজ। নাম জানা না জানা, ব্র্যান্ড ননব্যান্ড ফ্রিজের ছড়াছড়ি প্রায় সর্বত্রই। দরকার শুধু টাকা।