মেহেরপুরে ফুল ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) কর্তৃক ফুল ব্যবসায়ী টুটুল হোসেনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দোকানপাট বন্ধ রেখে বেলা ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন ব্যবসায়ীরা। পরে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারককে অপসারণের দাবি জানান ব্যবসায়ী সমিতি নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে ফুল ব্যবসায়ীর দোকানে দুর্ব্যবহারকারী সেই পিয়ন মহি উদ্দীনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।
মেহেরপুর বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দিপু মানববন্ধনে বলেন, অন্যায়ভাবে ফুল ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়েছে। তারই প্রতিবাদে এ কর্মসূচি। সুষ্ঠু সমাধান না হলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক আরিফুল এনাম বকুল, ব্যবসায়ী সমিতি নেতা আসাদুল আলম খোকনসহ ব্যবসায়ী সমিতি নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ ব্যবসায়ীবৃন্দ।
গত মঙ্গলবার বিকেলে বড়বজারের সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে টুটুলকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশের একটি দল। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ছানা উল্ল্যাহ নিজ কার্যালয়ে তাকে মারপিট করেন বলে অভিযোগ ফুল ব্যবসায়ীর। বিকেলেই তাকে আহত অবস্থায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওইদিন সন্ধ্যায় বিচারক ফুল ব্যবসীকে দেখতে হাসপাতালে গেলে ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন। নির্যাতনের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন ব্যবসায়ী সমিতি নেতৃবৃন্দ।
আহত ফুল ব্যবসায়ীর দোকান কর্মচারী রানা হামিদ বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের পিয়ন মহি উদ্দীন দোকানে এসে ককশিটে বিবাহবার্ষিকী লেখার জন্য বলেন। আমি দর হিসেবে ১৫০ টাকা দাবি করি। হাতে কাজ থাকায় কিছু সময় লাগবে বলে জানাই। এরই মধ্যে দোকানে পৌঁছান টুটুল ভাই। দরদাম নিয়ে ওই পিয়ন বলেন যে, ‘তোর বাপ এলে ঠিকই কম নিবি’। বাপ কে জানতে চাইলে বিচারিক হাকিমের নাম বলেন। তাকে মেহেরপুর জেলার সবই ভয় পাই বলেও হুমকি দেন ওই পিয়ন। একপর্যায়ে তিনি মোবাইলফোনে কল দিয়ে সম্ভবত স্যারের সাথে কথা বলে ফিরে যান। এর কিছু সময় পর পুলিশে একটি দল দোকান থেকে টুটুলকে পুলিশ গাড়িতে করে স্যার ডাকছেন বলে নিয়ে যান। আদালতে নিয়ে গিয়ে নিজ কার্যালয়ে টুটুলকে মারধর করা হয়।
এদিকে ফুল ব্যবসায়ী টুটুলকে মারধরের ঘটনায় পিয়ন মহি উদ্দীনের ওপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিচাররকে ভুল বুঝিয়ে তিনি মাথা গরম করেছেন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। পিয়ন মহি উদ্দীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীরা বলেন, তিনি আদালতের পিয়ন হওয়ায় চলাফেরা, কেনাকাটা, পারিবারিক কাজকর্মে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। কথায় কথায় বিচারককে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাজা দেয়ার হুমকি দেন। দোকানে কোনো জিনিসপত্র কিনতে গেলে ব্যবসায়ীরা তাকে দেখে ভীতিতে পড়েন। তার অসদাচরণে অনেকেই অতিষ্ঠ। কিন্তু আদালতে পিয়ন বিধায় তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেন না।
টুটুল ফুল সেন্টারের কর্মচারী রানা হামিদ আরো বলেন, পিয়ন মহি উদ্দীন ডিসকভারি মোটরসাইকেলে বেশ স্টাইলের সাথে এসে আমার দোকানের সামনে থামেন। মোটরসাইকেল থেকে না নেমেই তিনি কাজের কথা বলেন। কথার শুরুটাই ছিলো বেশ রুক্ষ। আমাদের পক্ষে দাম কম নেয়া সম্ভব নয় বলতেই তিনি উগ্র হয়ে ওঠেন। বিচারকে নাম উল্লেখ করে হুমকি-ধামকি দেন। বিচারকের নাম শুনে আমরা আরো নরমভাবে কথা বলি। এতে তিনি আরো বেশি উত্তেজিত হন এবং দুর্ব্যবহার করেন। মনে হচ্ছিলো তিনি আমাদের মারধর করবেন। উগ্রতা দেখিয়ে হুমকি দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। আমাদের সাথে তিনি দুর্ব্যবহার করে ফিরে গিয়ে উল্টো বিচারককে ভুল বুঝিয়েছেন। এদিকে গতকাল বুধবার জেলাজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি ছিলো ফুল ব্যবসায়ী টুটুলের ঘটনা। ওই ঘটনার জন্য পিয়ন মহি উদ্দীনকে ধিক্কার জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কিংবা বিচারকের পিয়ন যদি জনগণের সাথে এভাবে আচরণ করেন তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে বিচার দেবেন? এমন প্রশ্ন ছিলো অনেকের মুখে।
এদিকে সকালে মানববন্ধন শেষে নানা পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে ব্যবসায়ীদের আল্টিমেটামের সময় পার হতে থাকে। রাতে আবারও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ আলোচনায় বসেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যদিয়ে পরবর্তী করণীয় জানানো হবে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা। তবে অভিযোগের বিষয়ে আদালত সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।