মায়াময়ীর দাফনের পরও কি এলাকাবাসীর টনক নড়েছে?

অসুস্থ সন্তান সুস্থ হবে আশায় নির্জন দরগায় গাছের নিচে ৪ দিন ৪ রাত কাটানো মায়ের পক্ষেই সম্ভব। ভ্রান্ত বিশ্বাসে অসম্ভবকে সম্ভব করতে গিয়ে তিনি অবশ্য সর্প দংশনে মারা গেছেন। একজন মায়াময়ী মাকে কি একজনও নির্জন দরগায় রাতযাপনের পরিণাম সামনে মেলে ধরার মতো সচেতন মানুষ সমাজে নেই? তিনি না হয় ভ্রান্ত বিশ্বাসে জীবনটা হাতের মুঠোয় নিয়ে সন্তানের সুস্থতা কামনায় মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন, তাকে কেউ সুহালে ফেরালেন তো নাই-ই সর্প দংশনের পর দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার বদলে ওঝার কাছে নিয়ে করা হলো ঝাড়ফুঁকের নাটক। অবশেষে মৃতদেহ নেয়া হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মায়াময়ীর দাফনের পরও কি এলাকাবাসীর টনক নড়েছে? তেমন আলামত নেই।
দরগায় শুধু এক সপ্তাহ নয়, জীবনভর পড়ে থাকলেও কি অসুস্থ সন্তান সুস্থ হয়? কখনও হয়েছে? ভ্রান্ত বিশ্বাসে মনগড়া বহু সুস্থতার বর্ণনা কথিত থাকলেও সচেতনতার আলো যতো ছড়িয়েছে ততোই ওসব থেকে মুখ ফিরিয়েছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ চিনিকলের একজন শ্রমিক তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কলোনিতে বসবাস করে আসছিলেন। তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী। সন্তানের সুস্থতা জগতের সকল পিতা-মাতাই আশা করেন। যখনই মা শুনেছেন উপজেলারই ত্রিলোচনপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী দরগায় অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পড়ে থাকলে প্রতিকার মিলবে। তখনই মা সব কিছু বিসর্জন দিয়ে তিনি অসুস্থ সন্তানকে সুস্থ করার আশায় দরগায় গিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। সেখানে অবস্থানের সময় সর্প দংশন করে। সাপে কাটা রোগী দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার বদলে নেয়া হয়েছে ওঝার কাছে। অথচ ওঝা কবিরাজরা যে কখনোই বিষপ্রয়োগে কাতর রোগীকে সুস্থ করতে পারেননি তা এখনও ওই এলাকার মানুষ নিশ্চয় জানে না। ওঝারা পারেন ওই রোগীকেই সুস্থ করতে, যার সাপে কাটলেও সাপে বিষপ্রয়োগ করতে পারেনি। ‘ঝড়ে পড়ে বক, ওঝার বাড়ে জারি জুরি’র মতোই ঘটনা।
তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলেকে নিয়ে দরগায় পড়ে থাকার মধ্যে অপর দু সন্তানকে যে মায়ের আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করা তা নিশ্চয় অসুস্থ ছেলের সুস্থতা মানায় মরিয়া মায়াময়ী মা ভুলেই গিয়েছিলেন। দরগায় পড়ে থাকা অসচেতনতারই বহির্প্রকাশ। বাস্তবতা না বুঝেই কোনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তির প্ররোচনায় পড়ে মায়াময়ী মা সন্তানকে নিয়ে দরগায় অবস্থান নেন। সেখানে সাপে দংশনের পরও তাকে সুচিকিৎসা দেয়ার মতো দায়িত্বশীল একজনকেও পাওয়া যায়নি। এখনও যে সমাজে দরগা নিয়ে বাণিজ্য চলে, যে সমাজে সাপে কাটা রোগী নিয়ে ওঝা কবিরাজের ব্যবসা রমরমা, সেই সমাজ সত্যিই কুসংস্কারে অন্ধকারাচ্ছন্ন। দরকার আলোকিত মানুষ, যার বা যাদের আলোয় উবে যাবে কুসংস্কার।