দামুড়হুদা/জুড়ানপুর প্রতিনিধি: দামুড়হুদা বিষ্ণুপুরের সেই আলোচিত কুয়েতি জিন ভরা করা মহিলা কবিরাজ রোজিনার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ৪ জনকে আটকের পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের অনুরোধ এবং জীবনে আর কোনোদিন ওই ধাপ্পাবাজ মহিলা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে আসবে না মর্মে অঙ্গীকার করে ক্ষমা চাইলে চিকিৎসা নিতে আসা ওই ৪ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর কবরস্থানপাড়ার আব্দুল জলিলের স্ত্রী রোজিনা খাতুন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজি চিকিৎসার নামে লোক ঠকিয়ে আসছে। ধূর্ত ওই মহিলা কবিরাজ জিনের সাহায্যে সকল প্রকার রোগ সারানোর কথা বলে কবিরাজি চিকিৎসার নামে এলাকার নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে মোট অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার নিজ বাড়িতে বার বসিয়ে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন কবিরাজি চিকিৎসা। তার কথায় এলাকার সহজসরল নিরীহ জনগণ প্রতারিত হলেও ওই মহিলা কবিরাজ এখন অনেক বিত্তভৈববের মালিক। মাটি দিয়ে তৈরি বসতঘর ভেঙে হাঁকিয়েছেন ইটের তৈরি পাকা বিল্ডিং। বাড়ির সীমানা পাঁচিলও দিয়েছেন কিছুদিন আগে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ওই কুয়েতি জিন ভর করা মহিলা কবিরাজের বাড়িকে চিকিৎসা নিতে আসে চুয়াডাঙ্গা ঈদগাপাড়ার মহসিন আলীর ছেলে হাবিব (২৩), দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের মজারপোতা গ্রামের মৃত গোলজার আলীর স্ত্রী মহিমা বেগম (৩৫), চুয়াডাঙ্গা সদরের ঝোড়াঘাটার মৃত আকছেদ আলির ছেলে লুৎফর রহমান (৬০) এবং একই গ্রামের লুৎফরের স্ত্রী নয়ন তারা (৪০)। বিষয়টি গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরে বিষ্ণুপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এএসআই নুহুবুল হক কনস্টেবল শাহীনকে সাথে নিয়ে মহিলা কবিরাজের বাড়িতে হানা দিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ওই ৪ জনকে আটক করেন। এ সময় ধূর্ত মহিলা কবিরাজ রোজিনা ঘরের মধ্য ঢুকে পড়ে এবং পুলিশ, সাংবাদিক ও নেতাদের উদ্দেশে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং দম্ভোক্তি করে বলে পুলিশ প্রশাসন তার কিছুই করতে পারবে না। পরে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে এবং জীবনে আর কোনোদিন ওই ধাপ্পাবাজ মহিলা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে আসবে না মর্মে অঙ্গীকার করে ক্ষমা চাইলে চিকিৎসা নিতে আসা ওই ৪ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৯ জুলাই ওই মহিলা কবিরাজের ওষুধ খেয়ে তারই প্রতিবেশী সহজসরল দিনমজুর আনছার আলী মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় মহিলা কবিরাজ রোজিনার নামে আদালতে মামলা হয়। ওই সময় মহিলা কবিরাজ রোজিনা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় এবং কবিরাজি চিকিৎসা ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিষয়টির মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তার জামিন মঞ্জুর করেন। ধূর্ত ওই মহিলা কবিরাজ আদালতে বিচারকের কাছে কবিরাজি চিকিৎসা ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর আবারও শুরু করে কবিরাজি চিকিৎসা। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, জিনের সাহায্যে সকল প্রকার রোগ সারানোর কথা বলে ভণ্ড মহিলা কবিরাজ দীর্ঘদিন দরে এলাকার সহজসরল নিরীহ লোকজনকে ঠকিয়ে আসছে। তার শরীরে জিন ভরার বিষয়টি অহেতুক ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই না বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কবিরাজি চিকিৎসা করা হয় সম্প্রতি ওই মহিলা কবিরাজের এমন কথার প্রেক্ষিতেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার সকালে ওই মহিলা কবিরাজ বাড়িতে বার বসিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা দেয়ার সময় পুলিশ হানা দিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ৪ জনকে আটক করে।