মেহেরপুর অফিস: পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ফিরাতুল ইসলাম নিহত হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ডাকাত ফিরাতুল ইসলামের দাফন অনুষ্ঠানে নিকট আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকজন ছাড়া কেউ উপস্থিত ছিলেন না। প্রায় ডজন খানেক মামলার আসামি ফিরাতুল ইসলামের প্রাণ প্রিয় স্ত্রী-সন্তানেরা তাকে ছেড়ে দূরে চলে গেছে আগেই। স্থানীয়রা এমন তথ্য দিয়েছেন।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফিরাতুল ইসলামের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এদিন বাদ আছর জানাজা শেষে তার লাশ পিরোজপুর গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়। দুপুরে লাশ গ্রামে পৌঁছুলে পরিবারের লোকজনের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। লোক চক্ষুর আড়ালে স্বজনরা এক প্রকার শোক পালন করে। বিকেলে তার দাফন অনুষ্ঠানে নিকট আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকজন ছাড়া খুবই কম লোক উপস্থিত ছিলেন।
এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছেন তার অপরাধে দিনের পর দিন মামলা বাড়তে থাকায় স্ত্রী সন্তানেরা তাকে ছেড়ে দূরে আছে। নিহত ফিরাতুল ইসলাম ওরফে ফেরা মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার আইয়ন বেপারির ছেলে। তিনি ২ বোন ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। তার ২ বোন বিবাহিত। মেজ ভাই ফজলু প্রবাসী। ছোট ভাই বজলু মাঠে চাষাবাদ করে। ফিরাতুলের বাবা আইয়ন বেপরির নিজের জমির পরিমান খুবই কম। তাই অন্যের জমি লিজ নিয়ে তিনি চাষাবাদ করেন।
ফিরাতুলে চাচা আদম আলী এক সময়ে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কথিত আছে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি পার্শ্ববর্তী টুঙ্গী গ্রামের এক মাস্টারের বাড়িতে ডাকাতি করেন। এতে দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়।
নিহত ফিরাতুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস খাতুন মেহেরপুর সদর উপজেলার কলাইডাঙ্গা গ্রামের মেয়ে। সংসার জীবনে তাদের ঘরে রয়েছে এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে ফারহানা (১৫) এবারে ৯ম শ্রেণির ছাত্র ও ছেলে নাহিদ (৩)।
সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রী নার্গিস দু’ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করেছেন। ফিরাতুল ইসলাম সব শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানা পুলিশের হাতে গান পাউডারসহ আটক হয়। প্রায় ১৫ দিন আগে তিনি জামিনে ছাড়া পান।
উল্লেখ্য, সোমবার দিনগত মধ্যরাতে মেহেরপুর সদর উপজেলার নূরপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম খোকনের কাঁঠালবাগানে সন্দেহভাজন একদল সন্ত্রাসী অবস্থান করছিলেন। সেখানে পুলিশের একটি দল পৌঁছুলে তারা গুলি বর্ষণ করে। পুলিশ পাল্টা গুলি বর্ষণ করলে কিছু সময় বন্দুকযুদ্ধ চলতে থাকে। কয়েক মিনিট পরে স্থানীয় লোকদের সাথে নিয়ে সেখানে গেলে গুলিবিদ্ধ একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় একজন লাশটি পিরোজপুর গ্রামের সন্ত্রাসী ফিরাতুল ইসলামের বলে সনাক্ত করেন। একই সময় পুলিশ সেখান থেকে একটি এলজি সার্টারগান, ৫ রাউন্ড গুলি, ৫ ককটেল ও ৩টি রামদা (দেশীয় অস্ত্র) উদ্ধার করে। নিহত ফিরাতুল ইসলামের লাশ মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে নেয়া হয়। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের ৫ সদস্য আহত হন। তাদেরকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান মেহেরপুরে এএসপি (সার্কেল) আহসান হাবীব।