জবের মাঝে চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি মুসলিমপাড়ায় কিশোরী অপহরণের অপচেষ্টা!

মাইকে প্রচার : স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে আশে পাশে খুঁজেও ধরতে পারেননি অপহরকচক্রের তেমন কাউকে
স্টাফ রিপোর্টার: ‘এখানে বাদর খেলা দেখাতে এসে শিশু অপহরণের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে, ওখানে হয়েছে নারী অপহরণ। সেখানে ঢুকেছে জঙ্গি।’ এসব গুজবের মাঝে গতরাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা মুসলিমপাড়ার এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্কুলছাত্রী মিতা বলেছে, দুজন বাড়ির মধ্যে ঢুকে ছিলো। চিৎকার করতেই তারা পালিয়েছে। প্রতিবেশী অফরোজা জনিসের প্যান্ট ও কালো গেঞ্জি পরা এক যুবককে দ্রুত সরে যেতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। মসজিদের মাইকে প্রচার করে জনগণ সংগঠিত হয়ে পাশের মাঠ তল্লাশি করেও তেমন কাওকে ধরা সম্ভব হয়নি, একদল যুবক ধাওয়া করে হোমিওপ্যাথিক কলেজের দিকে গেলেও অপহরকদের ধরতে পারেননি। অপরদিকে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা শহলতলী ও গ্রাম বাংলায় গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি ডাকাতি, ছিনতাই ঘটনার সত্যতা মিললেও অপহরণের অপচেষ্টাসহ জঙ্গিদের অবস্থান বা গণহারে নারী অহরণ করে ধর্ষণের পর ছেড়ে দিচ্ছে বলে ছড়ানো খবরের সত্যতা মিলছে না। এরপরও একের পর এক গুঞ্জন, গুজবের পেছনে ছুটতে হচ্ছে পুলিশ, সাংবাদিকসহহ সংশ্লিষ্ঠদের। কোথাও কোথাও সন্দেহভাজনকে মারধর করে পরে ভুল শিকারের ঘটনাও ঘটছে বলে খবর পাওয়া যচ্ছে। গতকাল সোমবার সকালেই বেলগাছি ঈদগাপাড়ায় রশিদ নামের একজনকে বেদম প্রহর করা হয়। ডাকাত সন্দেহে তাকে মেরে আহত করার পর যখন ভুল ভাঙে তখন তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা শহরে রটে ভিন্ন রূপে। সকালেই অনেকে দৈনিক মাথাভাঙ্গায় ফোন করে বেলগাছিতে ডাকাতির সময় হাতে নাতে একজন ধরা পড়েছে কি-না তা জানতে চান। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতে একে সময় একেক গ্রাম থেকে নারী অপহরণ হয়েছে বলে ভুয়া খবর পাওয়া যায়। চুয়াডাঙ্গার ঠাকুকরপুর (পীরগঞ্জ) থেকে বাদর খেলা দেখিয়ে এক ব্যক্তি কয়েক শিশুকে অপহরণের অপচেষ্টা চালিয়েছে বলেও স্থানীয়রা মাথাভাঙ্গাকে জানান। এরই এক পর্যায়ে রাত সোয়া ১০টার দিকে বেলগাছি মুসলিমপাড়ার মসজিদের মাইকে বলা হয়। স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে অপহরণকারীদের ধরতে ছুটতে শুরু করেন। মহল্লার মিকাইল, উবাইদুর, শান্তি, রতন, ইমনও ছুটতে থাকেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি (অপারেশন) ইন্সপেক্টর আমির আব্বাস সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাজির হন মুসলিমপাড়ার মাঠপাড়ার ইসমাইল হোসেনের বাড়ি। তার মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মিতা জানায়, গতপরশু রাতেও কয়েকজনের উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম। গতরাত ১০টার দিকে দুজন বাড়ির ভেতরে ঢোকে। কলপাড়ে বেড়ার পাশে ওদের দেখে আমি কে কে বলে চিৎকার করতেই ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। দুজনের একজনের পরনের জিনসের প্যান্ট ছিলো কিছুটা গোটানো। প্রতিবেশী আফরোজা খাতুনও একজনকে সরে যেতে দেখেন বলে জানিয়েছেন। ফলে এ ঘটনাকে স্থানীয়রা বিভ্রান্ত বলে মানতে নারাজ। যদিও ঘটনার বর্ণনা দেয়ার এক পর্যায়ে স্কুলছাত্রী মিতা সংজ্ঞা হারায়। আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে গতপরশু রাতে ৪/৫ জনের একদল ব্যক্তি বুজরুকগড়গড়ির মৃত ওহিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে সুমনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে বলে জানিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলে। সুমন বাড়ি ছিলো না। ওর মা আলে নূর বেগম জানান, পুলিশ বলে পরিচয় দেয়া ৪/৫ জনের কথায় দরজা না খুলে যখন বলি মোবাইলফোনে খবর নিয়ে জানছি ওর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে কি-না বিস্তারিত না জেনে দরজা খুলবো না বলে জানালে ওরা দরজা ধাক্কা ধাক্কি করে সরে পড়ে। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি (অপারেশন) আমির আব্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, সুমনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট নেই। পুলিশের তেমন কোনো দলেরও সেখানে যাওয়ার কথা নয়। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ জানিয়েছে গত পরশু থেকে গতকাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে ৫০ গ্রাম গাঁজা। দামুড়হুদা থানা পুলিশ ৭ বোতল ফেনসিডিল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করেছে ৬ জনকে। জীবননগর থানা পুলিশ ১২ জনকে ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ১ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে।