অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি ॥ সুযোগ খুঁজছে গুজব রটনাকারীরা?

‘হুঁচুকে বাঙালি’ কবে কখন কীভাবে পাওয়া তা এখন বলা কঠিন। তবে এটা খেতাব, নাকি অপবাদ? যেটাই হোক, একেবারে যে বানোয়াট নয় তা ঘুরে ফিরেই প্রমাণ মেলে। যদিও সব হুঁচুকেরই আড়ালেই থাকে গুজব, আর এর আড়ালে থাকে কারো না কারো উদ্দেশ্য। একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মাঝে নারী অপহরণের গুজব রটানোর আড়ালেও কি কারো কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে রয়েছে? সঙ্গত প্রশ্নের জবাব মেলা কঠিন হলেও হুঁচুকে মাতার প্রবণতা রোখা নিশ্চয় অসম্ভব নয়। বিলম্বে বড় ধরনের খেসারত দেয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে গুজবে কান দিয়ে হুঁচুকে মেতে ওঠা নিয়ে দায়িত্বশীলদের নীরবতা কাম্য নয়।
চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই ডাকাতি রাহাজানি চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এর মাঝে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শিল্পনগরী দর্শনাও গুজবে আক্রান্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শহরতলীতেও একের পর এক নারী অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে মোবাইলফোনে খবর ছড়ায়। এর সত্যতা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গেলে সাংবাদিকদের খানেকটা হাস্যকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। বুঝতে বাকি থাকে না, এক শ্রেণির ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ ধরনের গুজব রটাচ্ছে, আর তাতে কান দিয়ে হুঁচুকে মেতে উঠছেন অনেকে। আতঙ্কগ্রস্তও হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেক গ্রামে বহিরাগত অপরাধীদের অবস্থান খবরে মসজিদের মাইকে প্রচার করে গ্রামবাসীকে সংগঠিত করা হচ্ছে, তল্লাশিতে পুলিশেরও ডাকা হচ্ছে। যেহেতু ডাকাতি, ছিনতাইসহ জঙ্গি অপতৎপরতা বিদ্যমান, সেহেতু গুজব হলেও তা প্রথমে হালকাভাবে দেখছেন না দায়িত্বশীলেরা। গতকাল চুয়াডাঙ্গা শহরতলী মুসলিপাড়ায় বহিরাগত দুজনকে দেখে আতঙ্ক চরমে রূপ নেয়। পরে মসজিদের মাইকে প্রচার করে বলা হয়, সকলকে সতর্ক থাকতে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের নবগঠিত নেহালপুর, কালুপোলসহ খেজুরা টেংরামারীতে ডাকাতদলের তা-বের পর আতঙ্ক ছড়ানো যেমন অমূলক নয়, তেমনই সেই আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে গুজব ছড়িয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করাও অসম্ভব নয়। অবশ্যই মনে রাখা দরকার, এই গুজবে আতঙ্ক গ্রস্ততার কারণে কয়েক বছর আগে শবেবরাতের রাতে ঢাকা সাভারের আমিনবাজারে রাস্তায় স্কুলপড়ুয়া ৫ কিশোরকে গণপিটুনিতে মারা হয়। পরে যখন ওদের পরিচয় মেলে তখন গুজবে মেতে সর্বনাশ করা হুঁচুকেদের ঘোর কাটে। চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে শহরতলী, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়ানো আতঙ্ক কাটাতে না পারলে বড়ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে।
পুনশ্চ: চিলের পেছনে ছোটার আগে কানে হাত দিয়ে দেখাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।