মোবাইলফোন তুলতে গিয়ে বিপত্তি : অক্সিজেনের অভাবে দিনমজুর জিয়ারুলের মর্মান্তিক মৃত্যু

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে বখতিয়ার হোসেন বকুল/শরীফুল ইসলাম: দামুড়হুদার ইব্রাহিমপুর গুচ্ছগ্রামে প্রায় ২০ ফুট গভীর কুয়োর মধ্যে পড়ে যাওয়া মোবাইলফোন তুলতে গিয়ে অক্সিজেনের অভাবে জিয়ারুল ওরফে গফুর (৩৬) নামের এক দিনমজুরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রতিবেশী হযরত আলী (৪৮) নামের আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ইব্রাহিমপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা জমির উদ্দীনের ছেলে লিটনের বাড়িতে টিউবওয়েল ও বাথরুমের পানি যাওয়ার জন্য খনন করা প্রায় ২০ ফুট গভীর কুয়োর মধ্যে পড়ে যাওয়া মোবাইলফোন তোলার জন্য নিচে নামলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে ওই ঘটনা ঘটে।

প্রতক্ষদর্শীরা জানান, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর কুলবিলা গুচ্ছগ্রামের জমির উদ্দীনের ছেলে লিটন সম্প্রতি তার বসতবাড়িতে টিউবওয়েল ও বাথরুমের পানি যাওয়ার জন্য ৫ ফুট চওড়া এবং প্রায় ২০ ফুট গভীর কুয়ো (হদ) নির্মাণ করেন। নতুন কুয়োয়  ২০টি রিং বসানো হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে প্রতিবেশী মোনাজাত আলী ওরফে মুনা পাগলের ছেলে জিয়ারুল ইসলাম ওরফে গফুরের ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি ওই হদের মধ্যে পড়ে যায়। জিয়ারুল ওই কুয়োর মধ্যে একোযুক্ত বাঁশ নামিয়ে মোবাইলফোনটি তুলতে নিচে নামে। এ সময় ওই হদের মধ্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে জিয়ারুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে বাঁচাতে প্রতিবেশী মৃত শের আলীর ছেলে হযরত আলী ওই বাঁশের সাহায্যে কুয়োর মধ্যে নামার পরপরই একইভাবে সেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই ২০ ফুট গভীর কুয়োর নিচে প্রায় ১৫ মিনিট অচেতন অবস্থায় থাকার পর স্থানীয়রা তাদের দুজনকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা হিসেবে একটি খাঁচা ফ্যান (টেবিলফ্যান) ওই হদের মধ্যে নামিয়ে দেয়। ফ্যানের বাতাসে তাদের চেতনা ফিরে আসে। এ সময় আরেক প্রতিবেশী আসানের ছেলে ফরজ আলীর (৪২) মাজায় দড়া বেঁধে ওই ২০ ফুট গভীর কুয়োর মধ্যে নামিয়ে দেয়। ফরজ নিচে নেমে আহত জিয়ারুল ও হযরতের মাজায় দড়ি বেঁধে দেয় এবং ওপরে থাকা লোকজন তাদেরকে ওই কুয়া থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় টেনে ওপরে তোলে। তাদের উভয়কে মুমূর্ষু অবস্থায় অটোযোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার সময় ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা পথিমধ্যে তাদেরকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সোনিয়া আহমেদ জিয়ারুলকে মৃত ঘোষণা করেন এবং হযরত আলীকে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চুয়াডাঙ্গার নবাগত জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসান, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ। দুপুরে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থ থেকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে নিহত পরিবারকে ১০ হাজার এবং আহত পরিবারকে ৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য তুলে দেন উপসহকারী প্রকৌশলী (দুর্যোগ) মো. নুরুজ্জামান ও অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম। বিকেলে নিহত জিয়ারুলের লাশ বাড়িতে পৌঁছুলে মা জোমেলা বেগম, স্ত্রী মুসলিমা খাতুন, একমাত্র শিশুকন্যা জিনিয়াসহ স্বজনদের কাঁন্না আর আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

প্রতিশেীরা জানান, নিহত জিয়ারুল ছিলেন পেশায় একজন দিনমজুর এবং সে ওই বাড়িতেই কাজ করতো। নিহত জিয়ারুলের স্ত্রী মুসলিমা খাতুন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ সময় জিয়ারুল মারা যাওয়ায় অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না তার। প্রতিবেশীরা আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের অফিসে বারবার ফোন করা হয়েছে। মাত্র ১৫ মিনিটের পথ অথচ তারা আসে পৌনে একঘণ্টা পর। তাও আবার ঘটনাস্থলে না এসে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রতি অভিযোগ তুলে বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যদি দেরি না করে সময়মতো আসতো তাহলে হয়তো দুজনকেই বাঁচানো সম্ভব হতো। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিহত জিয়ারুলের লাশের জানাজার নামাজ শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। দু ভাইয়ের মধ্যে নিহত জিয়ারুল ছিলেন ছোট। একমাত্র কন্যা জিনিয়া কুলবিলা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ র্থ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।