কালবোশেখি ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে আমবাগান পেঁপে বাগানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি : ঘরবাড়ি ভেঙে আহত কমপক্ষে ১০
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ সারাদেশে ঝড়-বৃষ্টির সাথে ব্যাপক বজ্রপাত হয়েছে। বজ্রপাতে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার পল্লিতে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছে। ঝড়ে দামুড়হুদার হাউলিতে ভেঙে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে আরও এক স্কুলছাত্র। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু ও কালীগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে তিনজন। এছাড়া গতকালই দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বজ্রপাতে নিহত হওয়া মৃতদেহ কবর থেকে চুরির আশঙ্কায় কার্পাসডাঙ্গার কানাইডাঙ্গায় নিহত সামাদের লাশ তার পৈত্রিক বাড়ির উঠোনে দাফন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও দমকা হাওয়া আর বজ্রপাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আমাদের দামুড়হুদা ও হাউলী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় কালবোশেখি দমকা ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে মাঠের বিভিন্ন ফসল, পেঁপে বাগান, আমবাগান এবং কলাবাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে অসংখ্য টিনের তৈরি বাড়িঘরের চাল। উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দু ধারের গাছপালা ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দামুড়হুদার লোকনাথপুরে গাছের নিচে চাপা পড়ে এক স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও আটজন। আহতদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। লোকনাথপুরে নিহত স্কুলছাত্রের পিতা শওকত আলী তার ছেলের মৃত্যুর জন্য হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ওই কালবোশেখি দমকা ঝড় আর শিলাবৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দামুড়হুদার দেউলী গ্রাম থেকে শুরু করে দামুড়হুদা সদর, বাস্তুপুর, জয়রামপুর হয়ে লোকনাথপুরের ওপর দিয়ে আকস্মিক কালবোশেখি ঝড় বয়ে যায়। সাথে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। তিন থেকে চার মিনিটের স্থায়ী ওই দমকা ঝড়ে উপজেলার প্রায় দু শতাধিক টিনের তৈরি বাড়িঘরের চাল উড়ে যায়। জয়রামপুর রেলস্টেশনের অদূরে রেললাইনের ওপর কিছু গাছপালা ভেঙে পড়লে খুলনাগামী মহানন্দা ট্রেনটি আটকে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় রেললাইনের ওপর থেকে ভেঙেপড়া গাছপালা সরানোর প্রায় আধঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দামুড়হুদা-দর্শনা সড়কের জয়রামপুর কাঁঠালতলার অদূরে টালিখোলার সামনে একটি মেহগনি গাছ উপড়ে সড়কের ওপর পড়ে এবং সড়কের দু ধারের ছোট বড় অসংখ্য গাছপালা ভেঙে রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় পৌনে একঘণ্টা পর পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়। এছাড়া মাঠে পাটেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাঠ থেকে ঘাস নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় দামুড়হুদার লোকনাথপুরে ইমামুল (১৫) নামের এক স্কুলছাত্র ভেঙে পড়া একটি চটকা গাছের বড় ডালের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে দর্শনা এবং পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। সে লোকনাথপুর স্কুলপাড়ার শওকত আকবরের ছেলে এবং লোকনাথপুর সহশিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। এছাড়া দমকা ঝড়ে ওই গ্রামের মাঝেরপাড়ার মৃত শুকুর আলীর দু ছেলে আয়ুব আলী ও মহিদুলের ৪ কক্ষ বিশিষ্ট ঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়ে মহিদুলের স্ত্রী লাখি খাতুন (৩৭), ছেলে লিমন (২৩) লিমনের স্ত্রী রিক্তা খাতুন (২০) এবং একই পরিবারের আয়ুব আলীর ছেলে কামরুলের দু শিশু কন্যা ৫ বছর বয়সী মিম এবং ৬ মাস বয়সী মাহি গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কাদিপুর গাংপাড়ার মৃত নিয়ামত আলীর দু ছেলে ওমর আলী ও মজিবার রহমান এবং প্রতিবেশী আ. আজিজ, আনারুলের টিনের তৈরি ঘর উড়ে মালামাল বিনষ্ট হয়েছে এবং একই গ্রামের রমজানের বসতঘরের ছাদের ওপর নির্মিত মুরগির খামারের টিনের তৈরি ছাউনি উড়ে প্রতিবেশী ওসমানের টিনের তৈরি বসতঘরের ওপর পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জুড়ানপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল দুপুরে কালবোশেখি ঝড়ে এলাকায় বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও গোপালপুর গ্রামের কড়ির দোপ মাঠে ধান বাধার কাজ করার সময় বজ্রপাতে ওই গ্রামের তিনজন গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন- মৃত হামিদুর রহমানের ছেলে রাহেন (৪০), একই গ্রামের মৃত রিয়াজ বাহারের ছেলে আমির হোসেন (৫০) এবং মৃত ফকির চাঁদের ছেলে জিন্নাত আলী (৫০। তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কানাইডাঙ্গা ও কুতুবপুরে একই সময়ে বজ্রপাতে ১ শিশুসহ দুজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। লাশ চুরির ভয়ে বাড়ির আঙিনায় চুলব্যবসায়ী সামাদের লাশ দাফন করেন তার পরিবারের লোকজন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রচণ্ডভাবে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয় চমকাতে থাকে বিজলী। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার রবিউল হকের ছেলে কানাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্র আ. মালেক (১০) বাড়ির পাশে আমবাগানে ঝড়ের মুহর্তে আম কুড়োতে যায়। এ সময় বজ্রপাত ঘটে তার শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মালেকের পিতা কাপার্সডাঙ্গা বাজারে নরসুন্দরের কাজ করেন। অপরদিকে একই ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের কাটাবাগান পাড়ার হায়দার আলীর ছেলে ১ সন্তানের জনক আ. সামাদ (২৮) বাড়ির পাশে নিজের জমির পাকা ধান আনতে গেলে একই সময় বজ্রপাত ঘটে তার শরীর ঝলসে যায়। সামাদ সাথে সাথে মাঠেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। পরিবাররে লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময়ে দুজনের মৃত্যু ঘটার কারণে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাদেরকে এক নজর দেখার জন্য দু গ্রামে উপচে পড়া ভিড় হতে থাকে। সামাদের লাশ পরিবারের লোকজন বাড়ির আঙিনায় বেদনাবিধুর পরিবেশে রাত ৯টার দিকে দাফন কার্য সম্পন্ন করেন। নিহত সামাদের চাচা সাবেক মেম্বার লিয়াকত আলী জানান, বিভিন্ন জায়গায় কবর থেকে লাশ চুরি হওয়ার ভয়ে আমরা বাড়ির আঙিনায় দাফন করছি।
ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বজ্রপাতে হতাহতদের মধ্যে একজন কানাইডাঙ্গা গ্রামের স্কুলছাত্র মালেক অপরজন কুতুবপুর গ্রামের কৃষক আ. সামাদ।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ১টার দিকে উত্তর-পশ্চিম কোণে ঘনকালো মেঘের সৃষ্টি হয়। কিছুক্ষণ পরই ঝড়ো হাওয়ার সাথে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা দক্ষিণপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মালেক (৯) বাড়ির পাশের আমবাগানে আম কুড়ানো অবস্থায় আহত হয়। তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। অপরদিকে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর কাটাবাগান পাড়ার হায়দার আলীর ছেলে আ. সামাদ (২৪) পার্শ্ববতী ডাবরি ডোবা নামক মাঠে ধান গোছানোর সময় তার ওপর ব্রজপাত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মাঠে থাকা লোকজন আ. সামাদকে বাড়িতে নিয়ে যায়। আব্দুস সামাদ এক সন্তানের জনক। ব্রজপাতে মৃত্যুর ঘটনায় গ্রাম দুটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকালই তাদের নিজ নিজ গ্রামে দাফন কাজ সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে।
জামজামি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গা জামজামির কৈমারা মাঠে বজ্রপাতে কৃষক উসমান মণ্ডলের (৪৮) জমির উঠতি ধান ঝলসে গেছে। স্থানীয়রা বলেছে, বজ্রপাতে এ মাঠের কৃষকেরা আগুন আগুন বলে চিৎকার করলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের নারী-পুরুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে একই সময় কুষ্টিয়া ইবির বলরামপুর গ্রামের ভ্যানচালক বজলুর রহমানের স্ত্রী ১ সন্তানের জননী গৃহবধূ রেখা খাতুন বজ্রপাতে আহত হন। তিনি আলমডাঙ্গা জামজামির খামারপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক জামিরুলের মেয়ে। গৃহবধূ রেখা বারান্দায় বসে ভাত খাচ্ছিলেন। বজ্রপাতে গৃহবধূ জ্ঞান হারান। তাকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরেছে।
পাঁচমাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ যুগিরহুদা গ্রামে কালবোশেখির ছোবলে পল্লী বিদ্যুতের পোল ভেঙে এলাকার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। স্থানীয়রা বলেছেন, হারেজ আলীর দোকানের সামনে পল্লী বিদ্যুতের পোল গোড়া থেকে ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু ও কালীগঞ্জ উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হরিণাকুণ্ডু ও কালীগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামের টুলু মণ্ডলের ছেলে মিরাজুল ইসলাম (৩৫), পারবতিপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে আমানউল্লাহ (৪৭) ও কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাপাড়া এলাকার শফিয়ার রহমানের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা খাতুন (৪৫)। হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, পোলতাডাঙ্গা গ্রামের বেলেদাড়ির মাঠে কাজ করছিলেন মিরাজ। সে সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়াও পারবতিপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে আমানউল্লাহ কাজি গাড়ির মাঠ থেকে গরুগাড়িতে ধান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। সে সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। কালীগঞ্জের অপর ঘটনায় নিহত আঞ্জুয়ারার ছোট ভাই শরীফ হোসেন জানান, আমার বোন বাড়িতে ধানসিদ্ধ করার কাজ করছিলেন। সে সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হরিণাকুণ্ডুতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুবে বজ্রপাতে দুই কৃষকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। পৌরসভার পারবতিপুর গ্রামের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে আমানুল্লাহ বেলা তিনটার দিকে গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাঠে ধান আনতে গেলে সেখানে বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন বলে তার ভগ্নিপতি অ্যাড. খোদা বকস জানান। আমানুল্লাহ এক কন্যা এবং স্ত্রী রেখে গেছেন। অপরদিকে এই সময়ে পৌরসভার পোলতাডাঙ্গা গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে মিরাজ মাঠে পানক্ষেতে পানি সেচের জন্য ড্রেন তৈরি করে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় একটি বজ্র তার শরীরের ওপর পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন বলে শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান। স্থানীয় লোকেরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মিরাজ নিঃসন্তান অবস্থায় স্ত্রী ও বাবা মাকে রেখে গেছেন। পাশাপাশি দুটি গ্রামে দুজন ব্যক্তি বজ্রপাতে মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
অপরদিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বজ্রপাতে নবচন্দ্র (২৭) নামে এক রিকশাভ্যানচালক মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের পিয়ারগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নব চন্দ্র ওই গ্রামের প্রেমা চন্দ্রের ছেলে। দুপুরে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে নব চন্দ্র ভ্যান চালিয়ে কামদিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকারচর গ্রামের মধ্যপাড়ার আক্কাছ মিয়ার ছেলে শাহাব উদ্দিন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি গতকাল বজ্রপাতে মারা গেছেন।
জানা গেছে, দুপুর সাড়ে বারোটায় ট্রাক্টর নিয়ে জমি চাষ করার জন্য শাহাব উদ্দিন মাঠে গেলে সেখানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বজ্রপাতে আনোয়ার হোসেন (৪২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে বাবু মিয়া (৯) নামের আরো এক শিশু। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আনোয়ার হোসেন ওই সময় হলহলিয়া নদীতে মাছ ধরছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল বাবু মিয়া। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা গ্রামের ভৈষার পাড়ে বজ্রপাতে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাইফুল (১২) নামের একজন নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাইফুল মিয়া ও ডালিম মিয়া (২৭) বাড়ি পাশের সবজি খেতে কাজ করছিলেন হঠাত্ ব্রজপাতে দুই ভাই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে সাইফুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা। ময়মনসিংহে শহরের জিলাস্কুলে ও ধোবাউড়া উপজেলায় বজ পাতে স্কুলছাত্র, কৃষকসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের জিলাস্কুল মাঠে ফুটবল খেলার সময় জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র তামিম (১৪) বজ পাতে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এদিন জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রাওতি গ্রামে দুই কৃষক বজ পাতে নিহত হয়েছে। এরা হচ্ছে রাওতি গ্রামের এংরাজ মিয়া (৪০) ও আরসাদ মিয়া (৪৫)।নারায়ণগঞ্জের গোপালদী বাজার আড়াইহাজারে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা ব্রামন্দী ইউনিয়নের ছোট মনোহরদী ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের মরাদাসদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। মাহমুদপুর ইউনিয়নের মরদাসাদী গ্রামের সুবেদা দুপুর ১২টার দিকে তার বাড়ীর সামনের বসে কাজ করছিলেন। এই সময় হালকা ঝড় ও বৃষ্টি হচ্ছিল। ঝড়ের সময় হঠাত্ বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে ব্রামন্দী ইউনিয়নের ছোট মনোহরদী গ্রামে আফাজ উদ্দিন এর ছেলে জামির হোসেন (৪২) বাড়ির সামনে খালে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হন। অন্যদিকে, বিশনন্দী ইউনিয়নের বিশনন্দী গ্রামের ইসহাক মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা (৪০) বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীঘর গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কালবোশেখি ঝড়ের সময় বজ্রপাতে একজন মহিলা মারা গেছেন এবং মানিকনগর এলাকার মেঘনার পাড়ে বালুবাহী বলগ্রেডের দুই শ্রমিক আহত হয়েছে। নিহতের নাম মোসাম্মত্ খোদেজা বেগম (৩০)। তার বাড়ি শ্রীঘর বণিকপাড়ায়। বাড়ির পাশে কৃষিজমিতে গরুর ঘাস কাটার কাজ করছিলেন খোদেজা হঠাত্ কালবোশেখি ঝড় শুরু হয় সেই সময় বিকট শব্দে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মানিকনগরের আহত শ্রমিকরা হচ্ছেন মো. আজিজুর রহমান (৩০) ও মো. সামছু মিয়া (৪০) তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার দৌলতপুর গ্রামে।