ঝিনাইদহের মধুহাটি ইউনিয়নে সনদে বয়স বাড়িয়ে রাতে বাল্যবিয়ে পড়ানোর অভিযোগ

 

বাজার গোপালপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে হচ্ছেই। বাল্যবিয়ে রোধের কোনো কার্যক্রমই কাজে আসছে না। কথিত গ্রাম্য মাতবরদের সহযোগিতায় জনপ্রতিনিধিদের অদৃশ্য ইশারায় এসকল বাল্যবিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো সময় জন্ম সনদে বয়স বাড়িয়ে আবার ঝামেলা এড়াতে রাতে এ সকল বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। ফলে ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে বাল্যবিয়ে রোধে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রতিনিধি এদিকে কোনো নজর দিচ্ছে না, নাকি দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। গত এক সপ্তাহে ইউনিয়রে কয়েকটি গ্রামে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৫টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আর এবিয়েগুলোর মধ্যে ২টি বিয়ে দেয়া হয়েছে। আর একটি বিয়ে একজন প্রতিনিধির বিরোধিতায় গ্রাম ছেড়ে বর-কনে ও তার লোজন পারিয়ে গেছে।

অভিযোগে জানা গেছে, দেশব্যাপী সরকার বাল্যবিয়ে রোধে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিযনে গ্রামগুলোতে বাল্যবিয়ে রোধর জন্য তেমন কোনো আইন-ই বস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতাই তথ্য গোপন করে জন্ম নিবদ্ধন করা হচ্ছে। আর সুযোগ বুঝে ৮-৯শ’ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঝামেলা এড়াতে রাতে এসকল বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। তবে এসকল নিবদ্ধনের কোনো হোদিস মিলছে না পরিষদের রেজিস্টারে। আর এই ভুয়া রেজিস্টারের ওপর ভর করেই নিকাহ রেজিস্টার বিয়ে রেজিস্ট্রি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত এক সপ্তাহে ইউনিয়রে কয়েকটি গ্রামে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৫টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আর এবিয়েগুলোর মধ্যে কামতায় মজিবুর রহমানের মেয়ে রেহেনা খাতুনকে একই গ্রামের সাবেক মেম্বার আবুল  খায়েরে ছেলে সোহেল রানার সাথে, মধুহাটি গ্রামের আব্দুল মালেকের মেয়ে জহুরা খাতুনেকে পাশে মামুনশিয়া গ্রামের নুরুর ছেলে আমিরুল ইসলামের সাথে রাতে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সরোগঞ্জ বোয়ালিগ্রামের অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ে পড়ানোর জন্য বেড়াশুলা গ্রামে রাতে অবস্থান নিলে গ্রামের মেম্বারের বিরোধিতায় অবশেষে গ্রাম ছেড়ে বর-কনে ও তার লোজন পালিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পরিষদে কর্মরত একজন গ্রাম পুলিশ জানান, ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ডা.  আকবর হুসাইনের স্বাক্ষর একজন গ্রাম পুলিশ ভালভাবেই অনুকরণ করেছেন। তার নিকট একটা সিলও আছে। বিয়ের ব্যাপারে যোগাযোগ করে তার নিকট গেলে সুযোগ বুঝে ৮-৯শ’ টাকা নিয়ে কাজটি করে দেন। তবে সে এই টাকা একা নেন না বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে ইউনিয়নের বিয়ে রেজিস্টার খলিলুর রহামন জানান, সরকার বল্যবিয়ের বিষয়ে কঠোর আর আমরাও বাল্যবিয়ে হলে বিরোধিতা করছি। কিন্তু যখন মেয়ের জন্ম নিবন্ধন দেখছি সরকারি বিধি মোতাবেক বিয়ের বয়স হয়েছে। আর তখনই বিয়ে রেজিস্টার করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে তিনি  কোন বাল্যবিয়ে পড়ানো বা রেজিস্টার করনে না বলে দাবি করেন। তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালে মধুহাটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১শ’ ২টি রেজিস্ট্রি আর ২৭টি বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে। ১৬ সালে ৯৮টি রেজিস্ট্রি আর ২৩টি বিয়ে বিচ্ছেদ করা হয়েছে। আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত রেজিস্ট্রি আর ১৭টি বিয়ে বিচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে গত বছর শুধু ইউনিয়নের ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীকে বাল্যবিয়ে আর প্রায় দেড় শতাধিক বিয়ে বিচ্ছেদ করা হয়েছে। যা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিয়ের রেজিস্টার হিসেবে ব্যাপক গরমিল রয়েছে বলে শিক্ষরা অভিযোগ করে জানান।

এ বিষয়ে ইউনিয়নের বেড়াশুলা গ্রামের মেম্বার রসুল জানান, আমরা কখনই বল্যবিয়ের ব্যাপারে সমর্থন করি না। গতপরশু রাতে সরোগঞ্জ বোয়ালিয়া গ্রামের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েকে আমার গ্রামে এন গোপনে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। আমি জানার পর ওই বিয়ের ব্যাপারে বিরোধিতা করার কারণে বিয়ে না করে ছেলে-মেয়ে ও তাদের সাথে আত্মীয় স্বজন দ্রুত গ্রাম ছেড়ে পারিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন ই-তথ্য সেবা কেন্দ্রের গোলাম হোসেন জানান, গত বা চলতি বছর কতো জনকে জন্ম সনদ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে রেজিস্টার করা নেই। এখানে কোনো অভিভাবক জন্ম সনদের ফরম পূরণ করে জমা দিলে আনলে টাইপ করে পিন্ট দেয়া হয়। তবে সঠিক হিসাব সচিব দিতে পারবেন বলে তিনি জানান।

তবে ইউনিয়ন সচিব নির্মল কুমার জানান, কত জনকে জন্ম সনদ দেয়া হয়েছে তার গণনা করা নেই। কম্পিউটারে হিসেব রয়েছে। গণনা করলে পাওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, আমার জানামতে ইউনিয়নে কোনো বল্যবিয়ে হচ্ছে না। আর কখনো ভুয়া সনদের প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বল্যবিয়ের ব্যাপারে একটা অপপ্রচারও চলছে বলে তিনি দাবি করেন।