মন্ত্রী আসবেন তাই কোটচাঁদপুরে ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: মন্ত্রী আসবে বলে! মন্ত্রী আসবে বলে ভূমিহীনদের ঘরবাড়িসহ প্রায় শতাধীক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো ঝড় বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে ও ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এমন হৃদয় বিদায়ক ঘটনার জন্ম দিয়েছে কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদালপুর রেলস্টেশন ও আশপাশ এলাকায় রেল কর্তৃপক্ষ। ২০ এপ্রিল ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তুু  এ পর্যন্ত ভূমিহীনদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের।

জানা গেছে, আগামী ২৫ এপ্রিল রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদালপুর রেলস্টেন পরিদর্শন ও পার্শ্ববর্তী স্কুল মাঠে জনসভা করবেন। যে কারণে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে রেলওয়ের জমিতে বসবাসকারী ভূমিহীন ও ব্যবসায়ীদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিয়ে রেলস্টেশন ও আশপাশ এলাকা ফাঁকা করা হয়েছে।

শনিবার এ প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে শিশু সন্তান নিয়ে ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পরিবারগুলোর নিদারুন কষ্ট ও কান্নার রোল। যা দেখে অনেকে চোঁখে পানি ধরে রাখতে পারেননি।

ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিহীন বিলকিস বেগম (৫৮) সাংবাদিক দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমার স্বামী বেশ কিছু দিন আগে মারা গেছে। সন্তাদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আমাদের দিন যায়। ১০ দিন আগে আমার মেয়েকে সিজার করেছি।  ২-৩ দিন আগে মেয়ে ও নাতিকে  বাড়িতে নিয়ে এসেছি।  হঠাৎ করে রেলওয়ের লোকজন আমাকে এক দিনের মধ্যে বাড়ি ভেঙে সরাতে বলে, আমি তাদের কাছে অনুনয় বিনয় করেছি আমাকে সময় দেয়ার জন্য। কিন্তুু দেয়নি। তারা পরের দিন মঙ্গলবার সকালে ঘরে আমার অসুস্থ মেয়ে থাকা অবস্থায় ঘর ভাঙতে শুরু করে। পরে তারা আমার সিজার করা অসুস্থ মেয়েকে টেনেহেঁচড়ে  বের করে ঘর ভেঙে ফেলে। তখন উপায় না পেয়ে ঘরের পাশের জঙ্গলে পেটে বেল্ট বাঁধা অবস্থায় মেয়ে ও ১০দিন বয়সের নাতিকে নিয়ে আশ্রয় নিই। পরে তারা ওই জঙ্গলও কেটে পরিষ্কার করে ফেলে।

বিলকিস বেগম কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, এখন এই ঝড় বৃষ্টির সময় কোথায় যাই। মন্ত্রী আসবে বলে গরিবের ওপর অত্যাচার কেন, কেন আমাদের সময় দেয়া হয়নি প্রশ্ন রাখেন বিলকিস বেগম। আয়ূব আলী (৬০) একজন ভিখারী তিনি একটি টিনের চালা করে বসবাস করে আসছেন ২০ বছর ধরে। অসুস্থার কারণে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করেন। তিনি কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে বলেন, বাবা একজন মন্ত্রী আসবেন বলে আমাদের ঘর ভেঙে দিলো ওরা। ওদেরকি দয়ামায়া নাই। আমরা এখন কোথায় যাই। না খয়ে আছি, এখন থাকার জায়গাটাও নাই। কেউ খোঁজও নেয়নি। তিনি বলেন এখানে প্রায় ৫০ পরিবার বসবাস করতো সবার ঘর ভেঙে দিয়েছে। এ সকল মানুষদের আমার মতো অবস্থা। এখন আমরা এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পাশের ঝোঁপঝাড় ও খোলা জায়গায় অমানবিক কষ্টে দিন পার করছি।

হোটেল ব্যবসায়ী হিরু মিয়া বলেন, আমরা রেলের জমিতে পাকাঘর নির্মাণ করে দীর্ঘ দিন ব্যবসা করে আসছি। রেলের জমি ব্যাবহারে লাইন্সেস ফি চাওয়া মাত্র পরিশোধ করে আসছি। তারপরও মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই বলে তিনি নোটিশ দেখান। নোটিশে  স্টেশন মাস্টার সহি করেছেন ১১ এপ্রিল, তাতে স্থাপনা সরানোর কথা বলা হয়েছে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে।

এ ব্যাপারে সাফদালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নওশের আলী নাছির এ বলেন, রেলের জায়গা থেকে রেলকর্তৃপক্ষ ওই সকল ভূমিহীনদের উঠিয়ে দিয়েছে এতে আমাদের কি করার আছে। তার পরও আমরা রেলকর্তৃপক্ষকে অনেক বুঝিয়ে বাজারের দিকের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙতে দেইনি। অবশ্য যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে তাদের আরো সময় দেয়া উচিত ছিলো। তবে চেয়ারম্যান নওশের আলী নাছির বলেন বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থগুলো ত্যাগ করা উচিৎ।

এ ব্যাপারে সাবদালপুর স্টেশন মাস্টার বিপ্লব হোসেন বলেন, রেলমন্ত্রী আসবেন যে কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্টেশনের সামনে ও পিছনে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি ভাঙতে হয়েছে। তিনি বলেন যদিও ২ দিনের নোটিশ দেয়া হয়েছিলো তারপর তাদেরকে ৭ দিনের সময় দেয়া হয়েছে সেই সাথে মাইকিং করা হয়েছে স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য। ৭ দিনের সময় যতেষ্ট সময় কি-না প্রতিবেদক এমন প্রশ্নের জবাবে স্টেশন মাস্টার বিপ্লব হোসেন বলেন, না তাদেরকে আরও সময় দেয়া উচিত ছিলো। কিন্তুু কী করবো আমরা চাকরি করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে হয়। ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি ভাঙার সময় আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে কিন্তু আমার করার কিছুই ছিলো না।

এ বিষয়টি নিয়ে রোববার দুপুরে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, যদিও বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের, তারপরও উপজেলা প্রসাশনকে বিষয়টি জানানো উচিৎ ছিলো। এ ব্যাপারে রেলকর্তৃপক্ষ আমাকে চিঠি বা মৌখিকভাবে কিছুই বলেনি। হঠাৎ শুনতে পেলাম সাবদালপুর উচ্ছেদ অভিযান চলছে। তবে ভূমিহীদের নিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি।