ঝিনাইদহের প্রভাত কুমার যেভাবে জঙ্গি আবদুল্লাহ

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় যে বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিলো সেই বাড়ির মালিক একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তার নাম আবদুল্লাহ। দেশজুড়ে এত সতর্কতা জারির পরেও আব্দুল্লাহ নিজের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে তিনি নিজেও জঙ্গি। তবে তাকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রাখার আগেই তিনি পরিবারসহ পালিয়েছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকেই তিনি মোটামুটি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। ঠনঠনেপাড়ায় বসবাস করলেও এলাকাবাসীর সাথে তার খুব একটা সম্পর্ক ছিলো না।

স্থানীয়রা বলেন, আবদুল্লাহ’র বয়স প্রায় ৪০ বছরের মতো হবে। ৫ বছর আগে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এর আগে তার নাম ছিলো প্রভাত কুমার। তার বাবার নাম চৈতন্য বাউতি। মা সন্ধ্যা রাণী। আবদুল্লাহরা তিন ভাই। বড় ভাই দিলীপ বিশ্বাস, মেজ ভাই বিপুল বিশ্বাস ও সবার ছোট আব্দুল্লাহ। আবদুল্লাহ তিনটি বিয়ে করেছে বলে এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবেশী আসলাম, ইউসুফ আলী ও চাঁদ আলী জানান, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পর আবদুল্লাহ  পোড়াহাটির ঠনঠনেপাড়ায় ওয়াহেদ নামের একজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মাঠের মধ্যে এই জমি কেনেন। সেখানে একটি দুই রুমের টিন শেডের বাড়ি তেরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা দাবি করেন আবদুল্লাহ’র বাড়িতে কেউ যেত না। মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে অচেনা কিছু  লোক তার বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো। বাড়িটি টিন দিয়ে চারিদিক থেকে ঘেরা ছিলো। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যেত না। বাড়িতে থাকলেও কেউ ডাকলে আবদুল্লাহ সাড়া দিতেন না। তিনি সবার থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করতেন। তবে আবদুল্লাহ জঙ্গি, এই কথা জানার পর গ্রামের লোকজন বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। আসলেই দোষী হলে তাকে গ্রেফতার করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে  পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় আবদুল্লাহর বাড়িটি ঘিরে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ রাতের জন্য অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন। পরদিন, শনিবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে অপারেশন ‘সাউথ প’ (দক্ষিণের থাবা) শুরু হয়। অপারেশন চলাকালে ওই বাড়ি থেকে ২০ ড্রাম হাইপ্রোজেন পার অস্কসাইড, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৯টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫টি জিহাদি বই, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, একটি মোটরসাইকেল, একটি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও দুটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয় বলে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি শেখ দিদার আহম্মেদ জানান।

ডিআইজি দিদার আহমেদ আরও জানান, বাড়িটিকে জঙ্গিদের বোমা তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে। এই বাড়িতে তিন-চার জন জঙ্গি ছিলো। তারা আগেই পালিয়ে গেছে। এই জঙ্গিদের সবাই জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্য। এই বাড়িতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভাগীয় পর্যায়ের লোকজন আসা যাওয়া করতো।