চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান খান বাবু ছাড়ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব

কেন্দ্রীয় পদ ছেড়ে বিএনপির অনেক নেতা এলাকায় ফিরছেন

 

স্টাফ রিপোর্টার: নিজেদের আগ্রহের কারণে প্রায় আড়াই ডজন নেতাকে কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক নেতৃত্বে ফেরত পাঠাবে বিএনপি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলার ১ নং যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান খান বাবুও রয়েছেন। কেন্দ্র থেকে বাবু খানসহ অর্ধশত নেতাকে ইতোমধ্যে জেলার দায়িত্বে ফেরার তাগিদ দিয়ে পত্র দেয়া হয়েছে বলেসূত্র জানিয়ে বলেছে খুব শিগগিরই আসছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। তাছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে এসব নেতার গুরুত্ব বিবেচনা করেই মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্বে নেয়ার সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করবে দলটি। কারণ গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতার জন্য একাধিক পদে কাউকে রাখবেন না দলের হাইকমান্ড।

জানা গেছে, গত বছর মার্চে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিলে এক নেতাকে একটি পদে রাখার বিধান দলীয় গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হয়। সে সময় প্রায় ৬১ নেতা কেন্দ্রের পাশাপাশি দলের আঞ্চলিক বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু এই বিধান হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ প্রায় ৩০ নেতা একটি পদ রেখে অপর পদটি ছেড়ে দেন। কিন্তু প্রায় সমানসংখ্যক নেতা দুই পদে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যান। নানা কৌশলে পদ আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিএনপি চেয়ারপারসনের কঠোর মনোভাবের কারণে তাদের সেই চেষ্টা তেমন কাজে আসেনি। দুই দফা কেন্দ্র থেকে একাধিক পদে থাকা নেতাদের পদ ছাড়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ২১ মার্চ এক নেতার এক পদ রাখতে গত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে এসব নেতার কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

পদ ছাড়ার তাগাদা দিয়ে যাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয় তারা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পটুয়াখালী জেলা সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরিদপুর জেলার সভাপতি শাহাজাদা মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাছিরনগর উপজেলা সভাপতি কাজী আকরামুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঘাটাইল উপজেলা সভাপতি লুত্ফর রহমান আজাদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হালুয়াঘাট উপজেলা সভাপতি আফজাল এইচ খান, যুগ্ম-মহাসচিব বরিশাল মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব নরসিংদী জেলা সভাপতি খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক লালমনিরহাট জেলার সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক নাটোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহকর্মসংস্থান সম্পাদক খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সমবায় সম্পাদক হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক জিকে গউস, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কলাপাড়া উপজেলা সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন, পল্লি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক নাগরপুর উপজেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, শিশুবিষয়ক সম্পাদক মির্জাপুর উপজেলা সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সহজলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও মেলান্দহ উপজেলা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক বরিশাল সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, উপ-কোষাধ্যক্ষ  চুয়াডাঙ্গা জেলার ১ নং যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বাবু।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই নেতাদের প্রায় সবাই কেন্দ্রে ফিরতি চিঠি পাঠিয়েছেন। আর যারা চিঠি পাঠাননি তারা মৌখিকভাবে চেয়ারপারসন মহাসচিবকে তাদের বক্তব্য জানিয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে দিয়ে জেলায় আঞ্চলিক পদ রাখার ব্যাপারে বেশির ভাগ নেতা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মূলত নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। একই অবস্থা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাদা মিয়ারও। উপদেষ্টার পদ ছেড়ে জেলার সভাপতি থাকতে আগ্রহ দেখিয়ে চিঠি দিয়েছেন এই দুই নেতা। বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমানও কেন্দ্রের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বরিশালে জেলা পর্যায়ের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পটুয়াখালী জেলার সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী কেন্দ্রে পাঠানো এক চিঠিতে তার জেলার সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। একই অবস্থা যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ারের। তিনিও বরিশাল মহানগরের সামগ্রিক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিঠি দিয়েছেন। এসব চিঠিতে অবশ্য কোনো পদ ছাড়ছেন তা স্পষ্ট করেনি তারা। আর যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন আগামী নির্বাচন পর্যন্ত জেলার পদে থাকতে দলের হাইকমান্ডকে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া একাধিক পদে থাকা অন্যসব নেতা কেন্দ্রীয় পদ ছেড়ে জেলার নেতৃত্বে থাকতে আগ্রহ দেখিয়ে চিঠি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আবুল খায়ের ভুঁইয়া জানান, দলের গঠনতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে তিনি এক পদে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ ছেড়ে জেলার পদে থাকার জন্য মহাসচিবকে জানিয়েছেন তিনি। একই বিষয়ে খায়রুল কবির খোকন জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তিনি দুই পদে থাকতে চান। বিষয়টি হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন।

এ বিষযে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্র মতে, জাতীয় কাউন্সিলে পাস হওয়া এক নেতার এক পদের বিধান কার্যকরী করতে কঠোর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কোনো পরিস্থিতিতে এ অবস্থান থেকে সরতে চান না তিনি। আর নেতাদের তৃর্ণমূল নেতৃত্বে নিজেদের অপরিহার্য দেখানোর দাবিকেও মানতে চান না তিনি। দলের হাইকমান্ড মনে করেন, কেউই কারো অবস্থানে অপরিহার্য হতে পারে না। এক নেতার শূন্যস্থান পূরণে আরেক নেতার সময় লাগতে পারে। তবে অবশ্যই বিএনপিতে যোগ্য অনেক নেতা রয়েছেন। নির্দিষ্ট কারো জন্য দল থেমে থাকতে পারে না।

এক নেতার এক পদের বিধান কার্যকরী করা এবং চিঠি-পরবর্তী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, অসুস্থতার কারণে ফিরতি চিঠির বিষয়ে এখনো কাজ শুরু করেননি। দু-এক দিনের মধ্যে দলের হাইকমান্ডের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক নেতাকে একটি পদেই থাকতে হবে। যারা আঞ্চলিক নেতৃত্বে যেতে চান তাদের আঞ্চলিক পর্যায়ের পদ দেয়া হবে। কারণ কেউই কোনো পদের জন্য অপরিহার্য নয়। এ বিষয়টি চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

1 comment

  1. খুব সুন্দর কথা নেতা এগিয়ে যাও আমরা আছি তোমার সাথে। জিয়ার সৈনিক এক হও। বাংলাদেশ জিন্দা বাদ তারেক জিয়া জিন্দাবাদ।

Comments are closed.