সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের ঘটনা

 

বাংলাদেশে কোনো কোনো দিন যেন মহামারীর মতো মৃত্যু ঘটছে পিচঢালা সড়কে। দু দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৪ জন। গত তিন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় চারশ ব্যক্তি। সড়ক দুর্ঘটনা কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষের মনে এমনই আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে যে, উপায়ান্তর না দেখে তারা বিবিধ প্রার্থনার আয়োজন করছে। গত ২৬ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে যায় একটি ভটভটি। এই দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৩ জন। অথচ মহাসড়কে ভটভটি বা নসিমন-করিমনজাতীয় পরিবহনের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফুটপাত দিয়ে চলাচলের সময় প্রাণ হারান ক্যামব্রিয়ান কলেজের এক শিক্ষক। রাস্তায় পাল্লা দিয়ে চলা দুটি বাসের মধ্যে একটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস ফুটপাতে তুলে দেয়। আর সেই বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান ওই শিক্ষক। দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে গত ২৬ মার্চ ভালুকায় এমনই একটি দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অথচ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার ফলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়েছিলো। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার কারণে অচিরেই সেই নিঃশ্বাসে যেন বিষবাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে দিন দিন দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। স্থানীয়রা মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো- রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালক, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, মহাসড়কের ওপরে বাজার, অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা। জনসাধারণের অসচেতনতাও এর জন্য দায়ী বটে।

এই সকল মৃত্যুর ঘটনাই বলে দিচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা ও নেপথ্য কারণ। পর্যবেক্ষকদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ফুটপাত দখল, ওভারটেকিং, ওভারস্পিড ও ওভারলোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন মান্য না করা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রা ক্রসিং না থাকা এবং জেব্রা ক্রসিং গাড়িচালক কর্তৃক না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইলফোন বা হেডফোন ব্যবহার করা, মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যান একই সাথে চলাচল প্রভৃতি কারণ দায়ী।

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির দেড় থেকে ২ শতাংশ। বিভিন্ন সময় ঘটা দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন ও দুর্ঘটনার ডাটা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করে সরকারের নিকট সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে শুধু চালকের জন্য দুর্ঘটনা ঘটার ২১টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পথচারীর ক্ষেত্রে দুটি কারণ, মালিকপক্ষের ত্রুটির জন্য ১০টি কারণ, মালিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়ে ১২টি কারণসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কারণ উল্লেখ করে সুপারিশ করা হয়েছে বেশ আগেই। সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত লাগাম টানতে হলে এ সকল সুপারিশের আলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। অন্যদিকে জনসচেতনতার জন্য এই বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা প্রয়োজন।