ইচ্ছা করে ভটভটির ওপর ট্রাক তুলে দেন চালক!

 

দামুড়হুদা জয়রামপুরে দিনমজুরদের রক্তে লাল পিচঢালা কালো পথ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গত রোববার সন্ধ্যায় মামলা করেছে পুলিশ। এতে বলা হয়েছে, ট্রাকচালকের অবহেলা ও বেপরোয়া গতির কারণেই ১৩ জন দিনমজুরের প্রাণ ঝরেছে। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আলমসাধুর (ভটভটি) ওপর দিয়ে ট্রাক তুলে দেন এবং ঠেলতে ঠেলতে ২০০ গজ দূরে নিয়ে যান।

মামলার বিষয়ে জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘চালকের খামখেয়ালিপনা ও বেপরোয়া আচরণের কারণে এতগুলো প্রাণ চিরদিনের জন্য ঝরে গেলো। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে এতগুলো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেলো। দুর্ঘটনার নামে ওই দিন যা হয়েছে, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
দামুড়হুদা থানায় মামলাটি করেছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মেজবাহুর রহমান। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের দৌলাতদিয়াড় বাদালপাড়ার ট্রাকচালক মো. রাজীব (২৭) ও তার দুই সহকারীকে (হেলপার)। দুই সহকারীকে অজ্ঞাতনামা দেখানো হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, চালক মো. রাজীব রোববার সকালে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে দর্শনার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ইঞ্জিনচালিত আলমসাধুতে (ভটভটি) করে চালকসহ ২৩ জন চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে আসছিলেন। জয়রামপুর স্কুল বটতলা এলাকায় চালক রাজীব ট্রাকটিকে মুখোমুখি আলমসাধুর ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এরপর আলমসাধুর আরোহীদের ট্রাকের সামনের অংশে বাঁধিয়ে ঠেলতে ঠেলতে ২০০ গজ দূরে নিয়ে যান।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ট্রাকচালক এতটাই বেপরোয়া গতি ও অবহেলা প্রদর্শন করেন যে তিনি ট্রাকটি থামানোর কোনোরূপ চেষ্টাই করেননি। রাস্তার ওপর ট্রাক থামানোর জন্য ব্রেক কষার কোনো চিহ্ন বা নমুনা দেখা যায়নি। ট্রাকচালক ও তার দুই সহকারী ইচ্ছাকৃতভাবে আলমসাধুর যাত্রীদের গুরুতর জখম করে ও মৃত্যু ঘটিয়ে দণ্ডবিধির ২৭৯, ৩৩৮-ক, ৩০৪, ৩০৪-ক ও ৩০৪-খ ধারা মোতাবেক দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নাগরিক সংগঠন জেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক এম এম শাহজাহান মুকুল বলেন, দণ্ডবিধির ৩০৪-ক জামিন অযোগ্য ধারা। অপরাধ প্রমাণিত হলে এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

ছয়জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন: রোববারের দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ছাড়াও ১০ জন মারাত্মক আহত হন। তাঁদের মধ্যে চারজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীবুল ইসলাম বলেন, আহতদের ছয়জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁদের রোববারই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।