শিক্ষাদানে কি বিনিময় মানায়?

শিক্ষকের ওপর শিক্ষার্থীর অগাধ আস্থা অনিবার্য। শিক্ষকের প্রতি ন্যূনতম শঙ্কা দুরস্ত, সামান্য সন্দেহও শিক্ষার্থী তথা জাতির ভবিষ্যতের জন্য কল্যাণকর নয়। এরপরও শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানই শুধু নয়, শিক্ষকের বাড়ি গিয়ে পড়তে বাধ্য করার কটূকৌশল বহু শিক্ষার্থী-অভিভাবককে বিষিয়ে তুলছে। এরপর যখন বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কম নম্বর দেয়ার কারণে বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়, তখন সেই অভিযুক্ত শিক্ষকের পরবর্তী পরীক্ষায় পরীক্ষক রাখার যুক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা যেমন অমূলক নয়, তেমনই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা জাগাও অস্বাভাবিক নয় নিশ্চয়।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের গতবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হয় পৌর কলেজ কেন্দ্রে। পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় বহু মেধাবী পরীক্ষার্থীকে কম নম্বর দেয়া হয়। এ কারণে তাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অনেকেই তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নসহ পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার আবেদন জানায়। অভিভাবকদের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে পৌর কলেজের অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরেও দেন। সরকারি কলেজের তরফে প্রশাসনের কাছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যও জানানো হয়। তদন্ত কমিটি গঠন, তদন্ত প্রতিবেদন পেশসহ নানা পদক্ষেপের পর জানা গেছে, এবার সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হবে সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে, আর সরকারি মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হবে পৌর কলেজ কেন্দ্রে। যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র বদল করা হলো, সেই অভিযোগ এবার আদর্শ মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীদের তুলতে হবে না তো? মূল শঙ্কা এটাই। তাহলে উপায়? অভিযুক্তকে পরীক্ষকের দায়িত্ব না দিলেই হয়।

শুধু উচ্চ মাধ্যমিকে নয়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বিজ্ঞান ব্যবহারিকেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কম নম্বর দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় কয়েকজন পরীক্ষকের বিরুদ্ধে তো অর্থ আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। অবশ্যই উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। একই সাথে শিক্ষকমণ্ডলীকেও শিক্ষক হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় অর্থলিপ্সুতা শুধু আত্মঘাতীই নয়, মহান পেশাকে কলুষিত করা। শিক্ষাদানে কি বিনিময় মানায়? ছোট্ট প্রশ্নটি জাগিয়ে তুলুক বিবেক। সকল শিক্ষক হোক সকল শিক্ষার্থীর আদর্শ।