যশোর বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন

চুয়াডাঙ্গায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন : পৌর কলেজ আউট সরকারি মহিলা কলেজ ইন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র পৌর কলেজ থেকে পরিবর্তন করে সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে করায় অভিভাবক, পরীক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে বোর্ডের  চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা পৌর কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৬২ জন অংশ নিয়ে ৫৪ জন জিপিএ-৫সহ মোট ৩১৯ জন পাস করে। তবে, পদার্থবিদ্যার ব্যবহারিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত নম্বর না দেয়ায় শতাধিক পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা হারায়। এতে চুয়াডাঙ্গার একটি প্রজন্ম চিরদিনের জন্য পিছিয়ে পড়ে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থী ও তাদের সংক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা এজন্য কলেজটির প্রভাষক শামীমা সুলতানাকে দায়ি করেন এবং পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ যশোর শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৬ মার্চ বোর্ড কর্তৃপক্ষ কেন্দ্র পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এদিকে এ বিষয়ে গতকাল শনিবার দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, চুয়াডাঙ্গার অভিভাবক, পরীক্ষার্থী এবং সুধীসমাজ যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানায়। গত বছরে প্রভাষক শামীমা সুলতানার প্রতিহিংসার শিকার পরীক্ষার্থীরা অনেকেই পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেনি। বোর্ডের সিদ্ধান্তে ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীরা শংকামুক্ত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছে। তবে, সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে শংকা দেখা দিয়েছে।

চলতি বছরের সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের ৫৮৬ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। যার মধ্যে বিজ্ঞানে রয়েছে ৬২ জন। অপরদিকে সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৩০৮ জনসহ  ৯৮৬ জন সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রামের রফিকুল হক জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ থেকে কেন্দ্র প্রত্যাহার করে আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজে নেয়ায় তিনি এবং তার সন্তান (উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী) এখন টেনশনমুক্ত। রেলপাড়ার বাসিন্দা তরুণ জোয়ার্দ্দার কেন্দ্র পরিবর্তনের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গতবার প্রভাষক শামীমা সুলতানা সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার দিনগুলোতে অহেতুক ঝামেলা এবং প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষায় যে অত্যাচার করেছে, তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।

চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা মেনে নিতে সমস্যা নেই। নতুন করে যারা পরীক্ষায় অংশ নেবে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. কামরুজ্জামান বলেন, সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় কেন্দ্র পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। সবমিলে চুয়াডাঙ্গাবাসীর জয় হয়েছে।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, পরীক্ষার্থীদের কেউ আর জিম্মি থাকবে না। যারা পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করে প্রাক্টিক্যাল খাতা আটকে বাণিজ্যের চিন্তাভাবনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। চুয়াডাঙ্গার শামীমা সুলতানাসহ বিতর্কিত শিক্ষকদের পরীক্ষা গ্রহণের বাইরে রাখা হবে।