চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বদলে এবার পৌর কলেজ কেন্দ্রে আদর্শ মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীরা

পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিকে কম নম্বর দেয়ার অভিযোগ : অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা না নেয়ায় কাটেনি শঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এবার আর চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ কেন্দ্র পরীক্ষা দিতে হবে না। পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় পৌর কলেজ কেন্দ্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিত কম নম্বর দেয়াসহ উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে যশোর শিক্ষা বোর্ড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চুয়াডাঙ্গার সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য কেন্দ্র হিসেবে সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে পৌর কলেজ কেন্দ্রে। কেন্দ্র পুনর্বিন্যাস করে সম্প্রতি এবারের এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় যে পরীক্ষক কম নম্বর দিয়েছেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, সেই পরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের তেমন তথ্য মেলেনি। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র পৌর কলেজের বদলে সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজকে করার খবর জানাজানি হলে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের স্মৃতিপটে ভেসে আসে পূর্বের কেন্দ্র পরিবর্তনের বিষয়টি। ২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষার বিজ্ঞান বিভাগে ব্যবহারিকে কম নম্বর দেয়াসহ নানা অনিয়ম উত্থাপনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্র বাতিল করে চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ কেন্দ্র করা হয়। ২০১৩, ২০১৪, ২০০১৫ ও ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক তথা এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পৌর কলেজে থাকলেও সর্বশেষ পরীক্ষায় পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়ায় বহু শিক্ষার্থীর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায়। পরীক্ষক শামীমা সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে বলা হয়, তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়ায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বহু মেধাবী পরীক্ষার্থীর কপাল পোড়ে। এ অভিযোগ শুধু শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থী অভিভাবকের তরফেই উত্থাপিত হয় না, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজও জেলা প্রশাসকসহ শিক্ষা বোর্ড বরাবর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করে। ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের অনেকেই যশোর শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করে ব্যবহারি পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নসহ নতুন করে পরীক্ষা নেয়ারও আবেদন জানায়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মতিনকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত দল গঠন করা হয়। তিনি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পেশ করেন।
অপরদিকে জেলা প্রশাসনের তরফেও অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়। অভিযুক্ত পরীক্ষক অবশ্য যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে নম্বর দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। অবশেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের পৌর কলেজ কেন্দ্রের বদলে ৪ বছর আগের সেই কেন্দ্র চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজকে পুনরায় কেন্দ্র করা হলো। একই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৪ বছর আগে কেন্দ্র হারানো সেই মহিলা কলেজ কেন্দ্র পেয়ে কি পুরাতন দিনের সেই ভুল সুধরে নেবে? নাকি আবারও আনিয়মের কারণে মহিলা কলেজকে হারাতে হবে কেন্দ্র? দেখার প্রতিক্ষা। তাছাড়া মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীদের গতবারেরমতো ব্যবহারিকে কম নম্বর পাওয়ার কষ্টে ডুবতে হবে না তো? কে দেবে নিশ্চয়তা? মহিলা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কারো কারো মধ্যে এখনই ফুটে উঠেছে শঙ্কা। সে কারণে পরীক্ষক বদলের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপের লক্ষ্যে লিখিত আবেদন করার কথাও ভাবছেন অনেক অভিভাবক।
প্রসঙ্গত, আগামী ২ এপ্রিল শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় বর্তমানে মোট স্বীকৃত কলেজের সংখ্যা ২৩। এসব কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের ১১টি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়া হবে। কোনো কলেজের পরীক্ষার্থী নিজ কলেজে পরীক্ষা দিতে পারে না। গতবার চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা পৌর কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। এবার সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে সরকারি মহিলা কলেজে। সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে ডা. আফছার উদ্দীন কলেজ, তেতুল শেখ কলেজ ও পৌর কলেজের পরীক্ষার্থীরা। পৌর কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীরা।