আত্মীয়ের লাশ দেখতে আসার পথে নিজেই লাশ হয়ে ফিরলেন পাটাচোরার গৃহবধূ চামেলী

দামুড়হুদাকার্পাসডাঙ্গা সড়কের নাপিতখালীর মোড়ের অদূরে পেছন থেকে চলন্ত করিমনে মোটরসাইকেলের ধাক্কা : এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ আহত ৭

 

দামুড়হুদা/কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় সড়ক দুর্ঘটনায় চামেলী (৪২) নামের এক গৃহবধূর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৭ জন। নিহত গৃহবধূ উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের ফতে আলীর স্ত্রী। তিনি দামুড়হুদার চিৎলা গ্রামের এক আত্মীয়ের লাশ দেখতে আসছিলেন। পথিমধ্যে তিনিই লাশ হয়ে ফিরলেন। আহতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের মৃত আকবার মল্লিকের ছেলে টুনু মল্লিক (৫২), একই গ্রামের হুরমত আলীর ছেলে বগা (৪০), বগার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী আনারুল ইসলাম আনার (১৬), টোকনের স্ত্রী খালেদা খাতুন (২২), করিমন চালক শের আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর (২৬), তিলে খাজা বিক্রেতা মোক্তারপুর গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে বেল্টু (৪৫) এবং মোটরসাইকেলচালক চুলব্যবসায়ী উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া (৩০)। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দামুড়হুদা-কার্পাসডাঙ্গা সড়কের নাপিতখালী মোড়ের অদূরে ওই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের গৃহবধূ চামেলীসহ মোট ৬ জন গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাটাচোরা থেকে করিমনযোগে চিৎলা গ্রামের এক আত্মীয়ের লাশ দেখতে যাচ্ছিলেন। করিমনটি দামুড়হুদা-কার্পাসডাঙ্গা সড়কের নাপিতখালী মোড়ের অদূরে পৌছুলে পেছন দিক থেকে আসা দ্রুতগতির একটি মোটরসাইকেল করিমনে সজোরে ধাক্কা মারে। এতে মোটরসাইকেল চালকসহ করিমনে থাকা যাত্রীরা পিচরোডে আছড়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। এ সময় করিমনের সামনে থাকা তিলেখাজা বিক্রেতা মোক্তারপুরের বেল্টুর ভ্যানে ধাক্কা লাগলে সেও গুরুতর জখম হয়। স্থানীয় লোকজন আহতদের উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। আহতদের মধ্যে গৃহবধূ চামেলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করেন। তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী আনারুল ও তার পিতা বগা মিয়া চিৎলা হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকিদের দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। বিকেলে নিহত গৃহবধূর লাশের জানাজার নামাজ শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

ভ্যানচালক তিলেখাজা বিক্রেতা মোক্তারপুরের বেল্টু বলেন, আমি বাড়ি থেকে তিলেখাজা তৈরি করে ভ্যানযোগে গোবিন্দহুদা স্কুলের দিকে যাচ্ছিলাম। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি ভ্যানসহ রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। আমিতো আহত হয়েছি সেই সাথে আমার ৪ কেজি তিলেখাজাও নষ্ট হয়ে গেছে।

মোটরসাইকেলচালক জিয়া বলেছেন, আমি মোটরসাইকেলযোগে চুয়াডাঙ্গায় যাচ্ছিলাম। আমি করিমনের পেছনে পেছনে আসছিলাম। নাপিতখালীর মোড়ের অদূরে এসে করিমনের ওভারটেক করার সময় করিমনচালক হঠাত ডান দিকে মোড় দেয়। তখন আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং করিমনে ধাক্কা লাগে। ওই সময় করিমনের সামনে থাকা তিলেখাজা বিক্রেতার ভ্যানের সাথে করিমনের ধাক্কা লাগে। ৩ ছেলে এবং ১ মেয়ের জননী নিহত গৃহবধূর বড় ছেলে ফিরোজ মালয়েশিয়া প্রবাসী, মেজ ছেলে দুদু চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে মার্স্টাসে অধ্যায়নরত, ছোট ছেলে কামাল এবং একমাত্র মেয়ে ফাতেমা দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত।