চুয়াডাঙ্গার ভুলটিয়া থেকে গরু চুরি : আলমডাঙ্গার পল্লিতে গরুসহ চোর পাকড়াও

 

ধরাপড়া চোরের দেয়া তথ্যে দুজনকে ধরে সালিসের প্রস্তুতি : পুলিশ দেখে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ

সরোজগঞ্জ/বদরগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ভুলটিয়া থেকে চুরি করা গরুসহ চোরচক্রের কথিত গডফাদার আলমসাধু চালক মতিয়ার আলমডাঙ্গায় ধরা পড়েছে। গতকাল ভোরে গরুটি চুরি করে আলমসাধুযোগে পালানোর পথে আলমডাঙ্গার পল্লি হাউসপুরে জনতার হাতে ধরাপড়ে মতিয়ার। তাকে আটকে চোরাই গরুসহ পুলিশে দেয়া হয়েছে।

এদিকে মতিয়ারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভুলটিয়ার চিহ্নিত মোমিন ও এসেমকে ধরে গ্রামে সালিসের আয়োজন করা হলেও কৌশলে ছেড়ে দেয়ায় তা ভেস্তে গেছে। গ্রামে সাবেক এক ইউপি মেম্বারসহ বাবুল নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের ভুলটিয়া গ্রামের আজিজুর রহমান আজিজের গোয়াল থেকে গতপরশু দিনগত রাতে একটি গরু চুরি হয়। ভোরে গৃহকর্তা গরু চুরির বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

অপরদিকে চোরাই গরুটি নিয়ে আলমসাধুযোগে সটকানোর সময় আলমডাঙ্গার পল্লিতে হাতে নাতে ধরাপড়ে ভুলটিয়ারই মতিয়ার রহমান। সে ভুলটিয়া শিশিরপাড়ার ফকির খন্দকারের ছেলে। চোরাই গরুসহ হাতে নাতে ধরাপড়ার পর সে তার কয়েক সহযোগীর নাম বলে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভুলটিয়ারই মোমিন ও এসেমকে আটক করা হয়। গ্রামের স্কুলমাঠে নিয়ে সালিসের প্রস্তুতি চলে।

অপরদিকে খবর পেয়ে সরোজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ভুলটিয়ায় পৌঁছান। পুলিশ পৌঁছুনো দেখে মোমিন ও এসেমকে ছেড়ে দেয়ার পায়তারা শুরু হয়। দুজনকে কৌশলে ছেড়ে দেয়া হলে সরোজগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ সাবেক মেম্বার মহাশিন আলীকে দোষারোপ করেন। অবশ্য সাবেক মেম্বার মহাশিন আলী তা অস্বীকার করে উল্টো পুলিশকেই দোষারোপ করে  বলেছেন, গ্রামের সকলে মিলে যখন আমরা সালিসের প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন কয়েকশ মানুষের মাঝে হাজির হয় পুলিশ। দারোগা আমাকে ডেকে নিয়ে যান দূরে। এ সময় গ্রামেরই বাবুল নামের একজন দুজনকে ছেড়ে দেয়। অথচ পুলিশ আমাকে উল্টো দোষারোপ করে। কেন না, আমিই তো  চোরাই গরুসহ আলমডাঙ্গার হাউসপুরে ধরাপড়ার খবর প্রথমে গ্রামবাসীকে জানিয়েছি। কারণ হাসনহাটির মহিলা মেম্বার রিনা প্রথমে তার গ্রামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে আমাকে জানান। আমি জানার পর মতিয়ারের সহযোগীদের ধরে সালিসের প্রাস্তুতি নেই। অথচ আমার বিরুদ্ধেই চোর ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ।

পুলিশ বলেছে, কৃষক আজিজের গোয়াল থেকে গরু চুরি হয়েছে। চোরাই গরুসহ হাতে নাতে একজন চোর মতিয়ার ধরা পড়েছে। সে মোমিন, এসেম ও নাসিরের নাম বলেছে। এদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ভুলটিয়ার এসেমের বিরুদ্ধে এর আগেও গরু চুরির অভিযোগ ওঠে। তবে ওরা ক্ষমতাসীনদলের লোকজনের সাথে ওঠা বসা করে বলে ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। ইতঃপূর্বে নবীননগরের এক কৃষকের গোয়াল থেকে একটি গাভী চুরি হয়। চোরাই ওই গাভিটি এসেমের বাড়ি থেকে উদ্ধার হলেও সেদফা তার বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটি করতেও সাহস পায়নি। এবার যখন গ্রামের সকলে মিলে এসেম ও মোমনিকে ধরে সালিসের পর পুলিশে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন তাদের কৌশলে ছেড়ে দেয়ায় ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করে গ্রামের সাধারণ মানুষ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, ভোর রাতে মতিয়ার তার গরুটানা আলমসাধু যোগে গরু নিয়ে ঝাউদিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। আলমডাঙ্গা হাউসপুরে পৌঁছুলে ভাঙ্গা রাস্তায় গাড়ি আটকে যায়। বেলগাছি গ্রামের সাবেক মেম্বার ফজলু আলমডাঙ্গা থেকে ভোরে গ্রামে বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়িতে গরু দেখে মতিয়ারকে জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে ফজলুকে গাড়ি দিয়ে চাপা দিতে যায় সে। এ সময়  গরু  বোঝাই গাড়িটি রাস্তার পাশে পুকুরের মধ্যে উল্টে যায়। গাড়ি ওল্টে গেলে মতিয়ার গাড়ি ও গরু ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মতিয়ার দৌড় দিলে ফজলু গরু চোর বলে চিৎকার দিলে এলাকাবাসী মতিয়ারকে তাড়িয়ে ধরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আলমডাঙ্গা থানার এসআই পিয়ার আলী গরু চোর মতিয়ারকে আটক করে এবং গাড়ি ও গরু উদ্ধার করে থানা নেয়। বিকেলে গরুর মালিক সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা করে। পরে সরোজগঞ্জ ক্যাম্পের আইসি এসআই শফিক গরু চোর মতিয়ার এবং গরু ও গাড়ি আলমডাঙ্গা থানা থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেয়া হয়েছে।