গাংনী খাদ্য গুদামে ২ হাজার কেজি চাল গায়েব!

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা খাদ্য গুদামে ২ হাজার ৭৫ কেজি চালের হদিস মিলছে না। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের টিআর ও জিআর বরাদ্দে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ চাল অব্যয়িত থাকলেও গুদাম কর্তৃপক্ষ ব্যয় দেখিয়েছে বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। চাল গায়েবের সন্দেহের তীর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের দিকে।

গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দিলিপ কুমার সেন জানান, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কর্তৃক গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর-খাদ্যশস্য) কর্মসূচির আওতায় ২৩৪ প্রকল্পের অনুকূলে ৩০০ মেট্রিক টন চাল উপ বরাদ্দ পাওয়া যায়। ভোলাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকে সোলার প্যানেল স্থাপনের নামে বিশেষ/৭৩ নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল গণির অনুকূলে ১ মেট্রিক টন এবং গাংনী থানাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নে ২১৯ নং প্রকল্পে ১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। চাল উত্তোলনের জন্য পিআইও অফিস থেকে ডিও গ্রহণ করেননি আব্দুল গণি।

অপরদিকে থানাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের কোনো কমিটি জমা দেয়নি। ফলে এ দু প্রকল্পের ২ মেট্রিক টন চাল অব্যয়িত রয়ে যায়।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ পরিবারের সহযোগিতার জন্য জিআর খাত থেকে ৭৫ কেজি (পরিবার প্রতি ২৫ কেজি) চাল বরাদ্দ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ওই চাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গ্রহণ না করায় অব্যয়িত থেকে যায়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের হিসেবে ওই অর্থ বছরে অব্যয়িত থাকা ২ মেট্রিক টন ৭৫ কেজি চালের প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পত্র প্রেরণ করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরও জানান, অদ্যবধি কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম তাকে জানিয়েছেন যে তার হিসেবে কোনো অব্যয়িত নেই। তাহলে ওই চাল কোথায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আয়েশা খাতুন জানান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার প্রেরিত পত্র অনুযায়ী ডিও (বিল আদেশ) তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া গুদাম কর্মকর্তা কিভাবে চাল ব্যয় করেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন। অব্যয়িত চালের বিষয়ে আগামী রোববার প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।

জানতে চাইলে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, থানাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের চাল প্রদান করা হয়নি। ভোলাডাঙ্গা কমিউনিটি সেন্টারে সোলার প্যানেল স্থাপন প্রকল্পের ১ মেটিক টন ও ৭৫ কেজি জিআর চালের হিসেবের বিষয়ে আগামী রোববার জানাবো। নিয়ম মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যানকে চাল প্রদান করা হয়ে থাকে বলে দাবি করলেও এ স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

থানাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, কমিটি নিয়ে নিজেদের মতবিরোধের কারণে তিনি কমিটি দাখিল করেননি। কমিটি দাখিল না হলে চাল উত্তোলনের প্রশ্নই আসে না। তবে ভোলাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক সোলার প্যানেল স্থাপন প্রকল্পের চেয়ারম্যান আব্দুল গণির মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

উপজেলা খাদ্য অফিসসূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত কাগজপত্র পেলেই প্রকল্পের চাল বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। চাল’র হিসেব রাখেন গুদাম কর্মকর্তা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়া বরাদ্দের চাল কিভাবে বিতরণ হয়েছে তার হিসেবে দেবেন গুদাম কর্মকর্তা। চাল’র হদিস মেলাতে না পারলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০১-২০১৬ আর্থিক বছর থেকে গত ৩০ জুন গুদাম পরির্দশন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ওই পরিদর্শনে কোনো অব্যয়িত চাল ছিলো না বলে জানায় একটি সূত্র। তবে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে অব্যয়িত চাল’র বিষয়ে যদি গুদাম কর্মকর্তার কোনো দুর্নীতি পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান।