সিম কোম্পানির ১ টাকা কম-বেশির অফার কার স্বার্থে? রিটেইলার নাকি গ্রাহক?

নজরুল ইসলাম: সিম কোম্পানিগুলো গ্রাহক আকৃষ্ট করতে প্রতি মুহূর্তে ম্যাসেজ অথবা লিফলেট প্রদর্শন করে অফার দিয়ে থাকে। অধিকাংশ অফারগুলো এমনভাবে দেয়া হয়ে থাকে যেখানে ১ টাকা হয়ে যায় গলার কাটা। ভাঙতি না থাকায় রিচার্জ সেন্টারগুলো ১ টাকা ফেরত দেননা। আবার ১ টাকায় তেমন কিছু না কিনতে পারায় দু কথা খরচ করে ফিরে যান গ্রাহক। প্রশ্ন উঠেছে ১ টাকার হিসাবটা গ্রাহক স্বার্থে না কি রিটেইলারদের স্বার্থে?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, টেলিটক সিম কোম্পানিগুলো গ্রাহক আকৃষ্ট করতে প্রতিমুর্হূতে এত অফার দিয়ে থাকে যে তা মনে রাখায় দায়। তাই কোম্পানিগুলো অফার স্মরণ করিয়ে দিতে প্রায় গ্রাহকের মোবাইলে ম্যাসেজ দিতে থাকে। কোম্পানির ম্যাসেজ রীতিমতো গ্রাহকের নিকট এখন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে মোবাইল কোম্পানির কল ট্যারিফগুলো পড়তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন গ্রাহকেরা। শ শ অফারের মধ্যে কোনো অফার কবে শুরু আর কবে শেষ এটা মনে রাখা সম্ভব না। সিম কোম্পানিতে চাকরি করা কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তিনিও বলতে পারবেন না কোন প্যাকেজের কল ট্যারিফ কতো। হাজারো প্যাকেজের মাঝে আপনি কয়টা মনে রাখবেন। এজন্য কোম্পানিগুলো ইউজারদের জন্য একটা অফার চালু করেছে, সেটা হলো বিশেষ কয়েকটা কোড নম্বর চাপলে আপনি জানতে পারবেন, আপনার সিমটি বর্তমানে কোন প্যাকেজে রয়েছে এবং কল ট্যারিফ কতো। কারণ আপনি ভুলেও কখনও জানতে পারবেন না আপনার মোবাইলটির কল ট্যারিফ কখন কোন প্যাকেজে পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
প্রতিটি সিম কোম্পানি ইন্টারনেট ব্যবহারের মেগাবাইট এবং কথা বলার জন্য টকটাইম অফার দিয়ে থাকে। সেসব প্যাকেজের মধ্যে আছে ৯ টাকা, ৩১ টাকা, ২১ টাকা, ৭৯ টাকা, ৮৯ টাকা, ২৩ টাকা, ২৬ টাকাসহ বিভিন্ন প্যাকেজ। প্যাকেজগুলো এমনভাবে দিচ্ছে যেখানে গ্রাহককে ১ টাকা ছেড়ে দিতে হবে নতুবা ১ টাকার জন্য ২ টাকার নোট দিয়ে সেখানেও ১ টাকা ছেড়ে দিতে হবে। কারণ সচারচার ১ টাকায় তেমনকিছু না পাওয়ায় তাই তার প্রতি খুব একটা গুরুত্ব থাকে অনেকের কাছেই। টকটাইম কার্ড এবং ইন্টারনেট প্যাকেজ কার্ড বিক্রি করলে দোকানির কমিশনের পাশাপাশি গ্রাহকের পকেট থেকে ১ টাকা কোনো কারণ ছাড়াই পেয়ে যাবেন বিক্রেতা। প্রশ্ন উঠেছে এ ধরনের অফার গ্রাহক স্বার্থে না কি রিটেইলারদের (রিচার্জ ব্যাক্তি) স্বার্থে? অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এটা কোম্পানিগুলোর সুক্ষ্ম কারচুপি।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, দেশে গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠান দূরালাপনের সুবিধা নিয়ে আসে ১৯৯৭ সালে, বাংলালিংক ১৯৯৯ সালে, রবি ১৯৯৭ সালে, টেলিটক ২০০৪ সালে, সিটিসেল ১৯৮৯ সালে এবং এয়াটেল ২০০৫ সালে। সেই থেকে যতো অফার গ্রাহকদের জন্য প্রচার করেছে তার অধিকাংশই ছিলো গ্রাহকের পকেট কাটা অফার। আসলে গ্রাহকেরা সবাই বলির পাঠা। সিম কোম্পানি যেভাবে আমাদের নাচাবে সেভাবেই আমাদের নাচতে হবে। এই নিয়তির বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের কারোই নেই। অফার ব্যবহারকারীদের অনেকেই বলেন, সিম কোম্পানির এ ধরনের অফার গ্রাহকদের সাথে কৌশলগত প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। বলবো কার কাছে শুনবেন কে?