চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ায় চাঞ্চল্যকর মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটনার মামলার রায় : একমাত্র আসামি লিপুর ফাঁসির আদেশ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলপাড়ার চাঞ্চল্যকর মা-মেয়ে হত্যা মামলায় একমাত্র আসামি মঞ্জুরুল ইসলাম মালিক লিপুকে (৪২) মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকার জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (২) আদালতের বিচারক  মো. রোকনুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে এই আদেশ দেন। দণ্ডিত মো. লিপু রেলপাড়ার গোলাম হোসেন মালিকের ছেলে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে তার ভাই ইয়াকুব হোসেন মালিকের রেলপাড়ার বাসায় ঢুকে ভাড়াটিয়া হাবিবুর রহমানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিনা আক্তার (৩২) এবং তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে আয়েশা খাতুনকে নৃশংসভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে। খুন করে পালানোর সময় ওইদিন বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার পাঁচকপাট নামক স্থানে চলন্ত ট্রেনে ওঠার সময় লিপু পড়ে যায় এবং তার ডান পা ট্রেনে শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর থেকে লিপু চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার উত্তর বারীখাল গ্রামের আব্দুল হাকিম খানের ছেলে চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে স্ত্রী ও মেয়ে হত্যার দায়ে ১৬ নভেম্বর রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যার অভিযোগ তুলে মো. লিপুকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ১৭ নভেম্বর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আমিনুল ইসলামের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে লিপু বলেছিলো, চুয়াডাঙ্গায় আসার পর তাদের বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকতো। নিহত রিনার বড় মেয়ে আয়েশাকে লিপু প্রাইভেট পড়াতো। বাড়িতে আসার ৬-৭ মাস পর থেকে রিনার সাথে লিপুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। রিনা ছিলো লিপুর বন্ধু, প্রেমিকা সবকিছু। বিভিন্ন সময়ে লিপু ও রিনা শারীরিকভাবে মিলিত হয়। গত মার্চ মাসের ৭ তারিখে তার সাথে আমার শেষ দৈহিক মিলন ঘটে। তারপর থেকে রিনা লিপুকে এড়িয়ে চলতে থাকে এবং ভালোভাবে কথা বলতো না। লিপু মনে করতো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে পরবর্তীতে লিপুর সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। ইতোমধ্যে সে মোবাইল নম্বরও পরিবর্তন করে ফেলেছিলো। সর্বশেষ ঘটনার দিনে সকাল সোয়া ৯টার দিকে কাগজের শপিং ব্যাগে করে মাংস চুরানো চাপাতি দিয়ে রিনার বাসায় গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এবং বড় মেয়ে আয়েশা দেখে ফেলায় তাকেও একই কায়দায় হত্যা করে।

এ ঘটনায় সদর থানার তৎকালীন এসআই আমির আব্বাস তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামি মঞ্জুরুল ইসলাম ইসলাম মালিক লিপুর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার একমাত্র আসামি লিপুকে মা-মেয়ে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (২) আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান। রায়ে মামলার বাদী হাবিবুর রহমান সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন এপিপি, অ্যাডভোকেট তালিম হোসেন ও অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী সাগর এবং আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট এমএম শাহজাহান মুকুল পরিচালনা করেন। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আসামি লিপু ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এ রায় চুয়াডাঙ্গাবাসীর আশার প্রতিফলন হয়েছে। বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমএম শাহজাহান মুকুল জানান, এ রায়ে সন্তোষ্ট নয়।