ঝিনাইদহে ব্যতিক্রমী উদ্যোগে পড়াশোনার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে শিক্ষার্থীরা !

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। এ উদ্যোগে এখানকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনে যুক্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে বর্তমানে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর এসব শিক্ষার্থী এখন লেখাপড়ার পাশাপাশি ফসলও উৎপাদন করছে। আর তাদের এ সফলতা দেখে দেশের সব কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রই এ কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। ২১ দশমিক ৩৮ একর জমির ওপর এ কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে ১০ শ্রেণিকক্ষ, ৫ ল্যাবরেটরি, একটি লাইব্রেরি, একটি সভাকক্ষ, শিক্ষার্থীদের হোস্টেল, অধ্যক্ষের বাসভবন ও গুদাম ঘর রয়েছে।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের উপসহকারী প্রশিক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত জমিতে ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেন, যাতে কৃষিকাজের বাস্তব জ্ঞান অর্জনসহ শিক্ষার্থীরা উৎপাদিত ফসল ভোগ করতে পারেন।
এ ভাবনা থেকেই ‘শিখি-করি-খাই’ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়, আসে সফলতাও। কৃষি বিভাগ তাদের এ কর্মসূচি এখন মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশের সব কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান দেশের অন্য ১৫ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ কর্মসূচি চালুর নির্দেশ দিয়েছেন।
ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক নাজিম উদ্দিনের পরিকল্পনা মোতাবেক তারা প্রথমে ৩৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করেন। ক্যাম্পাসের মধ্যে পরিত্যক্ত ৬০ শতক জমি আবাদযোগ্য করেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জৈব পদ্ধতিতে নিজেদের উৎপাদিত সবজিই সারা বছর খাচ্ছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বর্তমানে তাদের আবাদী জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ একরে। সেখানে চাষ করা হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, গাজর, লালশাক, পালংশাক, ব্রোকলি, ড্রাগন ফল, লেটুস, পুদিনা, ধনেপাতা, শালগম, ওলকপি, মটরশুঁটি, গম, সয়াবিন, ভুট্টা ও রসুনসহ ৬০ প্রকার ফসল।
কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ছেলেমেয়েরা কাজ করছেন ফসলের ক্ষেতে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত সবজি বাজারেও বিক্রি করছেন তারা। ফসল বিক্রি করা টাকায় কেনা হচ্ছে নানা কৃষি উপকরণ।
এ কর্মসূচির উদ্যোক্তা প্রশিক্ষক নাজিম উদ্দিন জানান, সাধারণত দেশের কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কৃষিকাজ দেখানোর জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যাতে লেখা- পড়ার পাশাপাশি সারা বছরই উৎপাদনে অংশ নিতে পারেন, এমন ভাবনা থেকেই এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের পুকুরে মাছও চাষ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, তিনি সার্বক্ষণিক কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের এ কর্মসূচির পাশে আছেন। আর মুখ্য প্রশিক্ষক মাহফুজ হোসেন মৃধা সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীরা কৃষিক্ষেত্রে যাতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য এ উদ্যোগ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ফসল উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত শিখতে পারছে। ভবিষ্যতে সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে তাদের শিক্ষাসফর ও টিউশন ফি পরিশোধেরও পরিকল্পনা রয়েছে।