হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার বাংলাদেশি

 

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র মসজিদ-উল-হারামের সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ায় প্রেক্ষাপটে হজ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব সরকার। ফলে চলতি বছর এক লাখ ২৭ হাজার বাংলাদেশি হজ পালনের সৌভাগ্য পাবেন। এই সংখ্যা দেড় লাখে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে পবিত্র কাবা শরিফ সম্প্রসারণ কাজের কারণে বিদেশি হাজিদের ক্ষেত্রে কোটা বেঁধে দিয়েছিলো সৌদি আরব সরকার। এই কোটা নীতির কারণে প্রতি বছর ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি হজ পালনে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। গত বছর এক লাখ এক হাজার ৮৫৭ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছিলেন। আর নিবন্ধন করার পরও প্রায় ৪০ হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ হজে যেতে পারেননি। সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়েছে, গত ৬ জানুয়ারি দেশের সর্বোচ্চ হজ কমিটি এই কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে এ বছর থেকে বাংলাদেশসহ সব দেশ থেকে ২০ শতাংশ বেশি মানুষ হজ করার সুযোগ পাবেন। মসজিদুল হারামের সমপ্রসারণ কাজ শেষের দিকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন বাড়তি হাজিদের জন্য নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেশের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন নাইফ কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য প্রস্তাব দেন। তিনি সুপ্রিম হজ কমিটির প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করছেন। যুবরাজ মুহাম্মদ আগামী হজে আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে স্বাগত জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ১৫ জানুয়ারি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছুদের প্রাক-নিবন্ধন শুরু হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছুগণ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি), জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিস ও ঢাকা হজ অফিস হতে প্রাক-নিবন্ধনের ডাটা এন্ট্রি সম্পন্ন করে ভাউচার গ্রহণ করছেন এবং ব্যাংকে টাকা পরিশোধের পর ব্যাংক থেকে সিরিয়াল নম্বরসহ প্রাক-নিবন্ধন সনদ পাচ্ছেন। প্রয়োজনে হজের জন্য কল সেন্টার নম্বরে (০৯৬০২৬৬৬৭০৭) ফোন করে এব্যাপারে সহযোগিতা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। সরকারিভাবে হজগমনে ইচ্ছুকদের প্রাক-নিবন্ধের সময়ে প্রত্যেককে নিবন্ধন ফিসহ ৩০ হাজার টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হবে। প্যাকেজের অবশিষ্ট অর্থ আগামী ২০ মে’র মধ্যে ব্যাংকে জমা দিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।

ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান জানান, এ বছর হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে গত বছরের প্রাক-নিবন্ধিত ৪০ হাজার হজযাত্রী অগ্রাধিকার পাবেন। এদিকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের জেদ্দায় সৌদি-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক হজ চুক্তি সম্পাদিত হবে। সৌদি আরবের হজমন্ত্রী ও বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান নিজ নিজ দেশের পক্ষে হজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। এবার হজ চুক্তিতে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহিম উদ্দিন বাহার। তিনি বলেন, এক লাখ ২৭ হাজার কনফার্ম। আরো ১০-১৫ হাজার বাড়তে পারে। এটা হলে প্রায় দেড় লক্ষ বাংলাদেশি এবার হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

২০১৭ সালের পবিত্র হজ পালনের ব্যয় সংক্রান্ত হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। সরকারি অনুমোদনের জন্য শিগগিরই এ প্যাকেজ মন্ত্রিসভায় উঠবে। চলতি বছর হজ প্যাকেজের মূল্য প্রায় ১০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত হজ প্যাকেজের আওতায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। এ ক্যাটাগরির প্যাকেজ মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে জনপ্রতি ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭২ টাকা। আর বি ক্যাটাগরির প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৩ লাখ ৮ হাজার ৬২৮ টাকা। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এ দুটি প্যাকেজ চূড়ান্ত হবে। প্যাকেজের বাইরে প্রত্যেক হজযাত্রীকে কোরবানি খরচ বাবদ সাড়ে ১০ হাজার টাকার সমপরিমাণ পাঁচশ সৌদি রিয়াল নিজ দায়িত্বে সাথে নিতে হবে। সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজের সাথে মিল রেখে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো তাদের প্যাকেজ ঘোষণা করবে। কোনোভাবেই এর চেয়ে কম মূল্যে প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না। এক এজেন্সি বছরে ৫ শ’র বেশি ওমরাহ যাত্রী প্রেরণ করতে পারবে না। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, এখন থেকে কোনো ওমরাহ এজেন্সি কোনোক্রমেই বছরে ৫০০ জনের অধিক ওমরাহ যাত্রী প্রেরণ করতে পারবে না। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির ২৩.২.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সকল ওমরাহ এজেন্সিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কেই এই আদেশ লঙ্ঘন করলে সরকার ব্যবস্থা নিবে।