দেশজুড়ে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ : জীবননগরে দুজনের মৃত্যু

 

আরও কয়েদিনের শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস : বিভিন্ন সংগঠনের শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: কনকনে ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে প্রায় সারাদেশ। একটু একটু করে শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। উত্তরাঞ্চলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। প্রতিদিন নামছে তাপমাত্রা। গতকাল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, কুড়িগ্রামের রাজারহাটসহ কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৮, রাজশাহীতে ৫ দশমিক ১, ডিমলা, ঈশ্বরদী ও দিনাজপুরে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। উত্তরের হিমালয় থেকে নেমে আসা ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া কাহিল করে ছেড়েছে জনজীবন। কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে প্রকৃতি-পরিবেশ। রাজধানী ঢাকায়ও এখন পাওয়া যাচ্ছে শীতের আমেজ। উত্তরের জেলাগুলোতে কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ ঘর থেকে বের হতে বেশ কষ্ট পাচ্ছে। অনেকে টাকার অভাবে কিনতে পারছেন না শীতবস্ত্র। গরম কাপড়ের অভাবে করুণ দশা অনেকের। বিশেষ করে ছিন্নমূল-হতদরিদ্র মানুষের অবস্থা শোচনীয়। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে তারা। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে। রাজশাহীতে পড়ছে কনকনে শীত। হিম কুয়াশার সাথে ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো জনপদ। বাড়ছে শীতজনিত রোগ। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে শীতজনিত রোগে দুজনের মৃত্যু হয়ে বলে জানা গেছে। এদিকে হরেক করমের শীতবস্ত্রের পসরা নিয়ে বসেছে মরসুমি ব্যবসায়ীরা। সরকারিভাবে জেলা, উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু কিছু এলাকায় গরম কাপড় বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, রাজধানীসহ সারাদেশেই শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। কারণ উত্তরের হাওয়ার বেগ বেড়েছে। আরও দুদিন তাপমাত্রা একইরকম থাকতে পারে। তিনি জানান, উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বরিশাল বিভাগ এবং ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপলগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরণের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ নয়, শীতল বাতাস বইছে। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ কিছু দিন অব্যাহত থাকবে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। যে কারণে দেশব্যাপী চলছে শৈত্যপ্রবাহ। সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকার পাশাপাশি মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। এ আবহাওয়াবিদ আরো বলেন, শীতের তীব্রতা থাকবে। আর জানুয়ারির শেষে আবার শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরণের কুয়াশাও অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, সকালে তীব্র শীতের মধ্যে উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিন কবিরাজ (৬৫) ও রাতে উথলীর নজরুল ইসলাম (৬৫) শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। এদিকে তীব্র শীতের কবলে পড়ে মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখির জীবনও কাহিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কষ্টের মধ্যে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে তারা খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে শীতজনিত রোগের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। খেটে খাওয়া দিনমজুরের কনকনে ঠাণ্ডায় কৃষিক্ষেতে কাজ করতে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে এ উপজেলায় এবার কম্বল বিতরণ তেমন একটা চোখে পড়তে দেখা যায়নি।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার পর শুক্রবার হতে ঈশ্বরদীতে তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। শুক্রবার এখানকার তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হলেও একদিনের ব্যবধানে গতকাল শনিবার প্রায় ২ ডিগ্রি নেমে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডায় পদ্মা পারের ও চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ হাড় কাঁপানো শীতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর এবং সকালে মানুষ পথের ধারে খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

গত কয়েকদিন থেকে এ অঞ্চলে তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবনে একপ্রকার স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাড়ছে শীতজনিত নানা অসুখ-বিসুখ। পৌষে শীত কম থাকলেও মাঘের প্রথম দিনে শীত হানা দিয়েছে। কুয়াশার পরিমাণ কম থাকলেও কনকনে হিমেল হাওয়া বইছে। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় তীব্র শীত পড়েছে। বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

সৈয়দপুরে কনকনে হাড় কাঁপানো শীত আর শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। দরিদ্র এবং খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।