শেয়ারবাজারে ফিরছে সুদিন আসছে নতুন বিনিয়োগকারী

 

স্টাপ রিপোর্টার: দীর্ঘ মন্দ কাটিয়ে কিছুটা সুদিনে ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনও বেড়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। দেড় মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারী বাজারে সক্রিয় হয়েছে। বাজারে আসছেন নতুন নতুন বিনিয়োগকারী। সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী এসেছে প্রায় ১৯ হাজার। এদের সিংহভাগই ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিনিয়োগকারী।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে আস্থাসঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। যে কারণে মাঝেমধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও তা স্থায়ী হয়নি। ফলে দীর্ঘ হয় দরপতনের ধারা। তবে নানামুখী পদক্ষেপের কারণে আস্তে আস্তে সঙ্কট কেটে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে বর্তমান বাজার চিত্র। তারা বলছে, ২০১০ সালের ধসের পর বেশ কয়েকবার বাজার এমন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। মুদ্রা বাজারের সামগ্রিক চিত্র পুঁজিবাজারের অনুকূলে। সঞ্চয়পত্র, এফডিআইসহ সব ধরনের আমানতের সুদহার বেশ কম। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষের খুব বেশি বিকল্প উৎসও নেই। ফলে শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগ আসা অনেকটা স্বাভাবিকই। তাদের মতে, মূলত ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দিতে থাকে। গত প্রায় দেড় বছর ধরে বাজারে অস্বাভাবিক উত্থান অথবা বড় ধরনের পতন দেখা যায়নি। এতে বাজারের ওপর প্রায় সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে। অস্বাভাবিক উত্থান-পতন না থাকায় বিনিয়োগকারীদের লোকসান দিয়ে বাজার ছাড়তে হচ্ছে এমন খবর শোনা যাচ্ছে না বছরের অধিক সময় ধরে।
সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ৪০ হাজার ১২১টি। যা নভেম্বর শেষে ছিল ২৯ লাখ ২১ হাজার ২৩৬টি। অর্থাৎ এক মাসে নতুন বিও হিসাব বেড়েছে ১৮ হাজার ৮৮৫টি। নতুন এ বিও হিসাবগুলোর মধ্যে ১০০টি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী রয়েছে। বাকি সবগুলোই ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী। এর মধ্যে একক বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব বেড়েছে ১১ হাজার ৫৭৬টি। বর্তমানে একক বিও হিসাব আছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৭১২টি।  ডিসেম্বরে যৌথ বিও হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ২০৮টি। বর্তমানে যৌথ বিও হিসাব আছে ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৪২৩টি। অপরদিকে কমছে অমনিবাস হিসাব। বাজারে দুটি অমনিবাস হিসাব কমে দাঁড়িয়েছে ২৪৫টি।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের মে মাস থেকেই বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিতে থাকে। ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন শেয়ারবাজার নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দেন।  সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শেয়ারবাজার নিয়ে মন্তব্য করার পর থেকেই সূচক ও লেনদেনে গতি ফিরতে দেখা যায়। সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে নিয়ে আসা হয়। এতে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে ঘুরপাক খাওয়া লেনদেন চলে আসে ১ হাজার কোটি টাকায়। ডিএসইর প্রধান সূচক পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৮০০ পয়েন্টের ঘরে। তবে সূচক ও লেনদেনের ওই গতি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি।