আমি যে হাতে ওদেরকে খাইয়েছি সে হাতেই ওদের মারলাম

 

স্বামী নিখোঁজ সুইসাইড নোট উদ্ধার : পুলিশের ধারণা শিশুদের হত্যার পর আত্মহত্যা করেন ওই নারী

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর দারুস সালামে নিজ ঘরে দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত গৃহবধূর নাম আনিকা (২০)। হত্যার শিকার দুই শিশু হলো কন্যা শামীমা (৫) ও ছেলে আব্দুল্লাহ (৩)। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দারুস সালাম থানার ছোট দিয়াবাড়ি এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে। তবে কি কারণে এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছেন আনিকা, সে ব্যাপারে পুলিশ ও তার পারিবারিক সূত্র কিছুই নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি। পুলিশের ধারনা স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে এবং দারিদ্র্যের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এ ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী শামীম হোসেনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ জানান, বটি দিয়ে দুই শিশুকে হত্যার পর মা বাসার সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। বেলা ২টার দিকে ওই বাসার দরজা ভেঙে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়। অনিকার স্বামী শামিম হোসেন একটি সেলুনে কাজ করেন।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত সুইসাইড নোটে অনিকা লিখেছেন, তোমার একটা ভুলের জন্য এতোবড় ঘটনা ঘটলো। তুমি ভেবেছ আমি শুধু শুনে যাবো। তুমি সবার কথা ভেবেছ। আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি যেখানে ওরাও সেখানে। শুধু একটাই কষ্ট মা, বাবা, ভাই, বোন কারো মুখ দেখতে পারলাম না। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে গেলাম। আমি এই দু হাত দিয়ে ওদেরকে খাইয়েছি। আর সেই হাত দিয়েই ওদেরকে মারলাম। আমাকে তোমরা মাফ করে দাও। আমাদের কপালে এই ছিলো। ওরা দুজন নিষ্পাপ। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। নোটের শেষ দিকে একটি লাভ চিহ্নের ভেতর অনিকা নিজের ও দুই সন্তানের নাম লিখে যায়।

দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুকুল আলম  জানান, গতকাল বেলা ৩ টার দিকে স্থানীয়রা ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পায় রক্তাক্ত অবস্থায় দুই শিশু মেঝেতে পড়ে আছে, আর আনিকা গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছেন। তারা দ্রুত ঘটনাটি থানায় জানালে পুলিশ ওই বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তাদের লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তিনটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে বটি ও বিছানা থেকে সুইসাইড নোটসহ হত্যার অন্য আলামত জব্দ করে পুলিশ। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী শামীম হোসেন নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধানে মাঠে  নেমেছ পুলিশ।

আশপাশের মানুষের বরাত দিয়ে ফারুকুল আরও বলেন, শামীম বেড়িবাধে সেলুনের কাজ করেন। অন্য এক নারীর সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। যা নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। সবগুলো বিষয় মাথায় নিয়েই তদন্ত চলছে।

আনিকার প্রতিবেশী সুমন বলেন, শামীম হোসেন পেশায় নাপিত। সে দিয়াবাড়ী বেড়িবাধ এলাকায় একটি টং দোকানের সেলুনে কাজ করেন। দুই বছর আগে শামীম তার পরিবার নিয়ে ২৯/১ নম্বর ছোট দিয়া বাড়ির আবু সাইদ মিয়ার একটি টিনসেড ঘর ভাড়া নেন। তার স্ত্রী চার মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন। এদিকে সেলুনের কাজে তার আয়-রোজগার তেমন একটা হোত না। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। এছাড়া শামীমের সঙ্গে কোন এক নারীর প্রেমের সর্ম্পক ছিল। সংসারের অভাব ও স্বামীর পরকীয়া নিয়ে প্রায়ই আনিকার সঙ্গে ঝগড়া হতো শামীমের। গতকাল সকালেও স্বামীর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর স্বামী বাসা থেকে বের হয়ে যায়। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। অনেকবার ডাকাডাকি করেও কোন সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে শিশু দুটির লাশ ও ঝুলন্ত অবস্থায় অনিকার লাশ উদ্ধার করে।

স্থানীয় অপর একজন জানান, আনিকা ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রথমে ছেলে আব্দুল্লাহকে বিছানার উপর নিয়ে বটি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেন। পরে মেয়ে শামীমাকে গলাটিপে হত্যা করে নিজেই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। তিনি আরো জানান, সকালে ঝগড়ার পর শামীম স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সমাবেশে যান। এরপর থেকে তাকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।