মেয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে ১৫ কিমি হাঁটলেন বাবা

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মেয়ের প্রচণ্ড জ্বর। তাই তাকে পাল্লাহাদা কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করলেন দরিদ্র বাবা গাতি ধিবার। কিন্তু লাভ হয়নি। পরের দিনই মেয়েটি জ্বরে কাতরাতে কাতরাতে চলে গেলো ওপারে। পাঁচ বছরের মেয়ের লাশ নিয়ে এবার বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু কীভাবে। তার যে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। বাড়িও ১৫ কিলোমিটার দূরে। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। উল্টো কর্মীরা বারবার তাগাদা দিচ্ছেন লাশ নিয়ে যেতে। অবশেষে কী আর করবেন, এই অসহায় বাবা মেয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে। সম্প্রতি ভারতের ওডিশা রাজ্যের আনগুল জেলার পেচামুন্ডি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে হিন্দুস্তান টাইমস-এর খবরে বলা হয়। ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়, গাতি ধিবার বলেন, ‘আমার মেয়েটি প্রচণ্ড জ্বরে মরে গেলো। এরপর হাসপাতালের স্টাফরা লাশ নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলো।’

রাজ্যটিতে গরিবদের জন্য নিখরচায় সরকারি হাসপাতালে থেকে লাশ পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হলেও গাতি ধিবার এ সম্পর্কে জানতেন না। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘মহাপ্রয়াণ’ নামের এ প্রকল্প চালু হয়। আর অন্য গাড়ি ভাড়া করার মতো অর্থ ছিলো না। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে আবারও ওডিশা আলোচনায় উঠে এসেছে। গত বছরের আগস্টেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো। আদিবাসী দানা মাঝির স্ত্রী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ছিলো গ্রামে তার বাড়ি। কিন্তু হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটেন। সঙ্গে ছিলো তার মেয়ে। পরে এক টেলিভিশনকর্মী এ দৃশ্য দেখে ফেলেন। তার চেষ্টায় ব্যবস্থা হয় অ্যাম্বুলেন্সের।

জেলা কালেক্টর অনিল কুমার সামাল বলেন, এ ঘটনায় উপবিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সামাল বলেন, উপকালেক্টর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছেন। পরে প্রতিবেদন অনুযায়ী নিরাপত্তারক্ষী ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপককে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাল্লাহারা কমিউনিটি হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র মোহান্তি বলেন, গণমাধ্যমে এ খবর আসার আগ পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে কিছু জানতেন না। তিনি আরও বলেন, তিনি তার (কমিউনিটি সেন্টার) স্টাফদের নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ যাতে নিজেরা লাশ বহন করে না নিয়ে যান। মহাপ্রয়াণ প্রকল্পের অ্যাম্বুলেন্সচালকদেরও প্রতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।