পুত্রবধূর নির্যাতনের শিকার শ্বশুরের অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং

পারিবারিক নারী নির্যাতনের জন্য শুধু পুরুষরাই যে দায়ি তা নয়, বরঞ্চ বহুলাংশে পুুরুষের তুলনায় নারীই যে অধিক দায়ী তার উদাহরণ ভুরি ভুরি। পরিবারে নারীরাই কর্তৃত্বের লড়াইয়ে মেতে নারীর ওপর নির্যাতন করে। হতে পারে সে শাশুড়ির ওপর পুত্রবধূর, পুত্রবধূর ওপর শাশুড়ির বা এক জায়ের সাথে অপর জায়ের। কিছুক্ষেত্রে ননদ মূলত শাশুড়ির পক্ষ নিয়ে পুত্রবধূকে কোণঠাসা করতে গিয়ে ভয়ানক হয়ে ওঠে। ওই ধরনের পরিবারের পুরুষ? প্রথম প্রথম কানকথা শুনে একটু আদটু ন্যায়পক্ষ নিলেও পারিবরিক শান্তি স্থাপনে সংসারটাই ভাগাভাগির পথে হাঁটেন। এর মধ্যে পড়ে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যটা হারিয়ে যায়।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, বাংলা থেকে একান্নবর্তী পরিবার প্রথা উবে যাওয়ার জন্য পারিবারিক এই কর্তৃত্বের লড়াই-ই প্রধানত দায়ী। পরিবারে শুধু যে নারীরাই নারী বা পুরুষের হাতে নির্যাতনের শিকার হন তাও নয়। নারী কর্তৃৃক পুরুষও নির্যাতনের বহু নজির রয়েছে। কোনো কোনো পদস্থ পুরুষও নিজের ঘরে নারীর কোষাঘাতে গুমরে কাদলেও লোক-লজ্জা বা ভবিষ্যত ভেবে নীরবেই দিনের পর দিন সহ্য করে যান। পুত্রবধূর হাতে শ্বশুরের নির্যাতন? তারও তো লজ্জার উদাহরণ মাঝে মাঝে পত্রস্থ হয়। এইতো গতপরশু দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় মোটা হরফে শিরোনাম হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর সরিষাডাঙ্গার বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ বিশ্বাস। বৃদ্ধের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর প্রতিবেশীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুত্রবরূ নারগিসের ওপর চড়াও হন। তাকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে ঘরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। বৃদ্ধের মেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছেন। মৃতদেহ হাসপাতালমর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এরপর? প্রতিবেশীদের উত্থাপিত অভিযোগ কি ধামাচাপা পড়ে যাবে? পুত্রবধূ কর্তৃক অসুস্থ শ্বশুর নির্যাতনের বিষয়টি কি আড়াল হওয়া উচিত? পুত্রবধু নাকি দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুরকে নির্যাতন করে আসছিলেন। ইতোপূর্বে ঝাটাপেটাও করা হয় বলে অভিযোগ। যে পুত্রবধু তার শ্বশুরের ওপর অতোটা ভয়ানক, সেই শ্বশুরের ছেলে কি তার একটুও খোঁজ রাখতে পারেননি? ছেলে পিতার প্রতি নূন্যতম কর্তব্যপরায়ন হলে বৃদ্ধকে কি অকালেই প্রাণ হারাতে হতো?
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যপরায়ণতা কি আইন করে নিশ্চিত করা সম্ভব। অবশ্যই না। এ জন্য দরকার সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার মায়া-মমতা সম্পর্কে সচেতনতা। অবশ্য, সন্তান তখনই পিতা-মাতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পায় যখন সে নিজেও পিতা বা মাতা হন। যদি কোনো পিতা তার পিতা-মাতার প্রতি দরদটা না বুঝে নিজের সন্তান সংসার নিয়েই মেতে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে তার বিবেকবোধ ভোতা। তা জাগিয়ে তোলার জন্য যখন দু একজন কুলাঙ্গারের কর্তব্যহীনতার বিষয়টি প্রকাশ পায়, তখনই সম্মিলিতভাবে তার বা তাদের উচিত শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে অন্যদের বিবেক জাগলে জাগতেও তো পারে।

Leave a comment