উড়ন্ত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দূরন্ত ছিনতাই!

 

চুয়াডাঙ্গার বেগমপুরে আবারও মোটরসাইকেলযোগে দু ছিনতাইকারী

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: আবারও চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর-উথলী সড়কে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে পথচারীদের নিকট থেকে মোবাইলফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ছিনতাইকারীরা টার্গেট করছে উঠতি বয়সী যুবকদের। ভীতিকর কথা বলে নিয়ে নিচ্ছে মোবাইল, লোকজন আসার আগেই সটকে পড়ছে ছিনতাইকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর-উথলী সড়কের কলোনিপাড়া গ্রামের আমানুল্লাহর দোকানের সামনে দ্রুতগতিতে এসে একটি পালসার মোটরসাইকেল দাঁড়ায়। মোটরসাইকেল থেকে তিন ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে দোকানে বসে। তখন দোকানটি বন্ধ ছিলো। এ সময় একই গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে রনি (১৮) দোকানের সামনে মোবাইলফোন নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলো। ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারীরা রনিকে কাছে ডেকে মোবাইলফোনটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। এ সময় বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাঁজরি গ্রামের রকিমের ছেলে সাগর ওই দোকানের সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলো। তার মোবাইলফোনটিও তারা নিয়ে নেয়। রনি এবং সাগরকে ওই তিনজন বলে তোদের মোবাইলে জুলির নম্বর কেন। তখন রনি ও সাগর হতকচিত হয়ে বলে আমরা জুলি নামের কাউকে চিনিনা। এর মধ্যে একজন ছিনতাইকারী মোবাইল করে বলে স্যার জুলির নম্বর এদের মোবাইলে পাওয়া গেছে। এদেরকে নিয়ে আসছি। তখন ছিনতাইকারীরা রনি এবং সাগরকে বলে আমাদের স্যার বেগমপুর দাখিল মাদরাসার ওখানে আছে তোরা দেখা করে চলে আসবি। এই বলে ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলে আর মোবাইলআলারা বাইসাইকেলে করে মাদরাসার দিকে যেতে না যেতেই মোবাইলফোন নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, ওই ছিনতাইকারীদের দেখতে পুলিশের মতোই মনে হচ্ছিলো। তাদের মাজায় পুলিশের মতো অস্ত্র রাখা ছিলো। তবে সেটি আসল না নকল বোঝার উপায় ছিলো না। আর এতোসব ঘটেছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। ছিনতাইকারীরা দ্রুতগতিতে এসছে দোকানের সামনে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে ঘটনা ঘটিয়ে চম্পট দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ি-দর্শনা সড়কের দক্ষিণচাঁদপুর গোরস্তানের সামনে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একই কৌশলে ৬ পথচারীর নিকট থেকে ৪টি মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। আর তারা হলেন- দোস্ত গ্রামের আমতলাপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে আ.রাজ্জাক, সোবাহানের ছেলে মিলন, হযরত আলীর ছেলে, লালন, জাহাঙ্গীরের ছেলে ছোটন, কুন্দিপুর গ্রামের শাহাজামালের ছেলে সোহেল রানা, ইসলামের ছেলে টিটন। সে সময় ছিনতাইকারীরা পথচারীদের সীমা নামের একটি মেয়ে ধর্ষণের গল্প শুনিয়ে ছিলো আর এবার ছিলো জলির কাহিনি। এসব ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন সময় নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয় দিয়ে সুবিধামতো জায়গায় অবস্থান নেয়। দলবদ্ধ বা বয়স্ক মানুষ থাকলে তাদেরকে কোনো কিছুই বলে না। যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ তাদেরকে টার্গেট করে রাস্তায় দাঁড় করায় এবং ভীতিকর সব কথাবার্তা বলে মানসিকভাবে টেনশনে রাখে। আবার অনেক সময় চড়থাপ্পড়ও মেরে থাকে ছিনতাইকারীরা। এদিকে ভুক্তভোগীদের দাবি প্রযুক্তির এ যুগে ছিনতাই হওয়া এসব মোবাইলফোন ট্রাকিঙে দিলে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা অসম্ভব না। তবে একটি সূত্র বলেছে, বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে বিকেলের দিকে উঠতি বয়সী যুবকেরা দর্শনায় যায় নেশা করতে। আর সুযোগ বুঝে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘটায় দুর্ঘটনা। আর এদের অধিকাংশের মাথায় থাকে হেলমেট। বিশেষ করে খাড়াগোদা ভায়া হিজলগাড়ি ভায়া দর্শনা সড়কটি ব্যবহার হয়ে থাকে। আর এসব ঘটনা ঘটে পড়ন্ত বিকেলের দিকে অথবা ঠিক দুপুরের দিকে যখন মানুষ দুপুরের গোসল এবং খাবার খেতে যায়। পুলিশ একটু তৎপর হলেই উড়ন্ত এসব ছিনতাইকারীরা একদিন গ্রেফতার হবেই। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান বলেন, শাদা পোশাকে কেউ পুলিশ পরিচয় দিলেই যেন চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশকে অথবা নিকটস্থ পুলিশকে না জানিয়ে তাদেরকে ছাড়া না হয়।