পেশিশক্তি প্রয়োগমুক্ত হোক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শিক্ষার্থীদের দেখে শিক্ষকরা শেখেন? নাকি শিক্ষকদের দেখে শিক্ষার্থীরা? কিছু শিক্ষক নিশ্চয় শিশুদের নিকট থেকে শিক্ষা নেন। তা না হলে শিশুদের মতো মারামরি কেন? জীবননগরের মিনাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপর শিক্ষকের হামলার খবরে সঙ্গত কারণেই প্রশ্নটি সামনে উঠে আসে। এছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে হানাহানির খবর তো অনেকটাই গাসওয়া, তারপর এবার কয়েক শিক্ষকের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিদ্যালয়ের সভায় নগ্ন প্রকাশ শিক্ষানুরাগী সচেতনহমলকে নিশ্চয় উল্লসিত করেনি। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত পৃথক দুটি প্রতিবেদনে যে দৃশ্যপট ফুটে উঠেছে তা সমাজ তথা জতির জন্য সুখবর নয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ গঠনের নিদের্শনা আছে। বিদ্যালয়ের তথা শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থেই স্বচ্ছতার সাথে কমিটি গঠন করা উচিত। আর তা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অগ্রগামী হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর সেটা করতে গিয়েই যদি ক্ষমতাসীনদলের স্থানীয় নেতার রোষানলে পড়তে হয়, হতে হয় হাতুড়িপেটার শিকার তাহলে কারোরই বুঝতে বাকি থাকে না, ক্ষমতার দাপট কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। পেশিশক্তি কখনই স্থায়ী নয়। স্থায়ী হয় না। তারপরও পেশিশক্তি প্রয়োগে কখনো কখনো কেউ কেউ পরিস্থিতি এতোটাই ভয়ানক করে তোলেন যে, প্রতিবাদ করতে সাহস পান না কেউ। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবদেনে মেহেরপুর গাংনীর দেবীপুর ডিজেএমসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষককে হাতুড়ি দিয়ে গুরুতর আহত করার যে তথ্য উঠে এসেছে তা সত্যিই কষ্টের। অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মিনাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে অপর শিক্ষক বিদ্যালয়েই দফায় দফায় মারপিট করেছেন। মারপিট ঠেকাতে পাশের লোকজনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছে। অথচ বিদ্যালয়েরই প্রধান শিক্ষকের আহ্বানে তারই সভাকক্ষে বিদ্যালয় পরিচালনা বিষয়ে সভা চলছিলো। প্রধান শিক্ষকের সামনেই এক শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনার দায় কি প্রধান শিক্ষক এড়াতে পারেন? প্রধানের প্রাধান্য থাকলে নিশ্চয় অন্যদের অতোটা বেয়াদবি কাউকে দেখতে হতো না। শ্রদ্ধাবোধটাও উবে গেছে। তাছাড়া একজন নারী শিক্ষকের অপর শিক্ষক কি বলেছেন কি বলেননি, তা নিয়ে ওইভাবে অপর শিক্ষকের অতোটা মাতামাতিই বা কেন? যার ওপর হামলা তিনিও সহকর্মী, যাকে কিছু বলা হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনিও সহকর্মী। অবশ্য, যার ওপর হামলা তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগেরও তদন্ত হওয়া দরকার। এর আগে দরকার হামলাকারী শিক্ষকের সুস্থতা যাচাইসহ শিক্ষকতায় থাকার ন্যূনতম যোগ্যতাটা পুনরায় খতিয়ে দেখা। কেননা, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের আচরণ শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রায় প্রভাবিত করে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমটির সভাপতি পদটি একসময় যতোটা সম্মানের ছিলো এখন অতোটা কি আছে? শিক্ষক নিয়োগে অর্থবাণিজ্যেরই শুধু অভিযোগ নয়, বিদ্যালয়ের নানা খাতের তহবিলের ভাগ নেয়ার অভিযোগও অনেকের ক্ষেত্রেই পুরোনো হতে বসেছে। অনৈতিক সুবিধা নেয়ার যতো অভিযোগ বাড়ছে ততোই সভাপতি হওয়ার জন্য সমাজের কিছু ব্যক্তি মাতোয়ারা হয়ে পড়ছেন। দক্ষতা বা গ্রহণযোগত্যার চেয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যারা দায়িত্ব পেতে চান তাদের রুখতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তাছাড়া বিদ্যালয়ে যে শিক্ষক সহকর্মীকে মারপিট করেন তাকে শিক্ষক বলা যায় কি-না তাও নতুন করে ভেবে দেখা দরকার। তদন্তপূর্বক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি মানেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া।

Leave a comment