ঝাটাপিটার শিকার শ্বশুরকে ওষুধের বদলে বিষ তুলে দিয়ে হত্যা? ক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পুত্রবধূ

চুয়াডাঙ্গা মোমিনপুরের সরিষাডাঙ্গার বৃদ্ধ রশিদ বিশ্বাসের মৃত্যুর পর প্রতিবেশীদের মুখে মুখে ঘুরে ফিরছে তার নির্যাতিত হওয়ার নানা চিত্র

 

স্টাফ রির্পোটার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরিষাডাঙ্গার যে শ্বশুর তার পুত্রবধূর ঝাটাপিটার শিকার হয়েছিলেন, সেই শ্বশুরের মৃত্যুতে তার পুত্রবধূকে পিটিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিবেশী। অভিযোগ তুলেছে, পুত্রবধূ তার শ্বশুরকে ওষুধের বদলে তুলে দিয়েছে বিষ। সে কারণে বিষপানে মৃত্যু হয়েছে ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ শ্বশুর আব্দুর রশিদ বিশ্বাসের।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ আব্দুর রশিদ বিশ্বাসের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে হাসপাতালমর্গে নেয়া হয়। আজ মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হতে পারে। পুলিশ  আব্দুর রশিদ বিশ্বাসেরে অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।

স্থানীয়রা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে পুত্রবধূ নারগিস খাতুন তার শ্বশুর রশিদ বিশ্বাসকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। গতকাল সোমাবার সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃদ্ধ শ্বশুর তার পুত্রবধূর কাছে ওষুধ চান। ছেলে হাসেম আলীর স্ত্রী নার্গিস ওষুধ দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে রশিদ বিশ্বাস মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফাট করতে থাকে। অথচ তাকে হাসপাতালে নেয়ার তেমন তোড়জোড় যেমন করতে দেখা যায়নি, তেমনই প্রতিবেশীদেরও তেমন কাওকে জানানো হয়নি। ঘটনার প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে ডাকা হয় গ্রাম্য চিকিৎসককে। চিকিৎকসের পরামর্সে হাসপাতালে নেয়ার পথে বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী ফুঁসে ওঠে। তাদেরই একাংশ ওই পুত্রবধূকে ধোলাই দিয়ে ঘরে তালা বদ্ধ করে রাখে। গতকাল বৃদ্ধার মেয়ে বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুরত হাল রির্পোট শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। নারগিস খাতুন অবশ্য তার শ্বশুরকে ওষুধের বদলে বিষের বোতল দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, নিজেই বিষপান করে চিৎকার করতে থাকে। স্বামী বাড়ি ফিরে ডাক্তার ডাকে। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন শ্বশুর।

প্রতিবেশীদের অনেকেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রশিদ বিশ্বাসের ছেলে হাসেম আলীর স্ত্রী নার্গিস (৩৫) দীর্ঘদিন ধরেই তার শ্বশুরের সাথে ভালো আচরণ করতেন না। নানাভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। কিছুদিন আগে তাকে ঝাটা পেটাও করেন। গতকাল সকাল ৬টার দিকে হারনিয়া রোগে অসুস্থ্য শশুর পুত্রবধূর কাছে ওষুধ চাইলে ঘরে থাকা বিষ খেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি নেতিয়ে পড়েলে পুত্রবধূ নার্গিস মর মর বলে গালিগালাজ করতে থাকে। সাংবাদ পেয়ে ছেলে হাতেম আলী উপস্থিত হয়ে গ্রাম্য চিকিৎককে ডেকে আনেন। শ্যালোইঞ্জিন চালিত নচিমন যোগে হাসপাতালে নেয়ার পথে বেলা ১১টার দিকে তিনি মৃত্যু বরণ করে। মৃত্যুর সংবাদে গ্রামবাসী বিক্ষুপ্ত হয়ে পড়ে বৃন্ধার পুত্রবধূকে হালকায় গণধোলাই দিয়ে একটি ঘরের মধ্যে তালবন্ধ করে রাখে। সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের এসআই সুমন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্বার করেন। সুরত হাল রির্পোট প্রণয়নের পাশাপাশি লাশ ময়নাতদন্ত করার জন্য হাসপাতালমর্গে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। বৃদ্ধ রশিদ বিশ্বাস হারনিয়া রোগে ভুগছিলেন। তাকে উঠতে বসতেই তার পুত্রবধূ হেনস্থা করতেন বলেও পড়শিদের অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, শ্বশুরের পাতে ঠিক মতো ভাতও দিতো না নার্গিস। উপরোন্ত শ্বশুরকে হুমকির মধ্যেই থাকতে হতো।