ভাগ্যের চাকা কিছুতেই ঘোরাতে পারেননি সুবদিয়ার আজগার

সাইফ জাহান: ভাগ্যের চাকা কিছুতেই ঘোরাতে পারেননি চুয়াডাঙ্গা সুবদিয়ার আজগার আলী। দু কাঠার পৈত্রিক ভিটে আর মাঠাম মাত্র ৭ কাঠা জমির মালিক জন্মসূত্রে হলেও তা কেড়ে নিয়েছে অসুখে বিসুখে। ভেবে ছিলেন নিজের ব্যর্থতা সন্তানের সফল্যের আবরণে আড়াল করবেন। তাও হলো না। ছেলে প্রতিবন্ধী। বাধ্য হয়ে তাকেও বেছে নিতে হয়েছে পিতার পেশা রিকশার প্যাডেলে ভর দেয়া। ওতে দিন আনা দিন খাওয়ার মতো কোনো রকম চলে যাচ্ছে ওদের।
আজগার আলীর বয়স এখন আশি ছুঁইছুই। কনকনে শীতেও তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের রাস্তায় রিকশা চালিয়ে রোজগার করতে হয়। কেন? তা জানতেই একান্তে কথা হয় …. সড়কের …. বসে। শুরুতেই হতাশার সুর। না, এখন আর যাত্রী ওঠে না। বয়স হয়ে গেলে শরীরটাও যেন নিজের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আর অন্যরা বৃদ্ধদের দিকে ঘুরেও তাকাতে চান না। ভাবেন বৃদ্ধের রিকশায় উঠলে বোধ হয় টানতে পারবে না। আরে বাপু পারবো না কেন? সেই পাকিস্তান আমলে রিকশা চালিয়েছি। রিকশা চালানোর বয়স যখন ১০ বছর তখন হলো স্বাধীনতাযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হলো। রিকশা চালানো আর ছাড়া হলো না।
মানুষ কেন গরিব হয়? খানেকক্ষণ থেমে থেকে বৃদ্ধ আজগার আলী বললেন, ভাগ্যেরই দোষ। অবশ্য তিনি একপর্যায়ে অকপটে স্বীকার করলেন- ভাগ্য নিজের হাতে গড়তে হলে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটিই করতে হয়। ভাগ্যের আসলে কোনো দোষই নেই। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে মৃত জনাব আলীর ছেলে বৃদ্ধ আজগার আলী বললেন, বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। নিজের সামান্য জমি আর বর্গা চাষ করে ভালো চালাতেন সংসার। আমরা দু ভাই ছোটবেলায় বুঝিনি কি করতে হবে আমাদের। বাবা কৃষক, আমরাও কৃষিকাজ করবো। এই ভেবে শুরু হলো রাখালি করা। বড় হলাম। বিয়ে হলো। খরচ বাড়লো। তখন বয়স ২৬-২৭ হবে। ৬শ টাকা দিয়ে রিকশা কিনে চালানো শুরু করলাম। ভেবেছিলাম রিকশার তিন চাকাই ঘুরিয়ে দেবে ভাগ্য। না, হলো না। দিন আনা দিন খাওয়ার সেই দশা থেকেই গেলো। যখন সারাদিন ভাড়া মেরে দেড় দু টাকা হতো তখনই টেনে টুনে সংসার, এখন দেড় দুশ টাক হলেও সংসারের টানাটানিটা আর গেলো না।
আজগার আলী বললেন, পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে ভিটের ২ কাঠা আর মাঠাম ৭ কাঠা জমি পেয়েছিলাম। অসুখ হলো। বেচতে হলো সেই জমি। এক ছেলে এক মেয়ে হলো। ছেলের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, ওই ছেলেকে লেখাপড়া শেখাবো। বড় হলে অভাব যাবে। ছেলে যতোই বেড়ে উঠতে লাগলো, ততোই আমার স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হতে লাগলো। কারণ, ছেলেটা শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। স্বামী-সংসার নিয়ে ভালো আছে। ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে সংসারে খরচ দেয়। আমার আর ছেলের আয়ে সংসারটা কোনো রকম চললেও ভিটের জন্য কেনা দু কাঠা জমির রেজিস্ট্রি খরচটা আর জোগাড় করতে পারছি না।
প্রসঙ্গতঃ আজগার আলী বৃদ্ধ ভাতা পেলেও ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও তাকে প্রতিবন্ধীভাতা দেয়া হয় না। ভাতা দিলে ভাগ্যের চাকা তেমন না ঘুরলেও কমাতে তো পারে দুশ্চিন্তা।