পরাজিত প্রার্থীরা নেমেছেন টাকা আদায়ের অভিযানে জীবননগরে এক ইউপি চেয়ারম্যানকে চপোটাঘাত

স্টাফ রিপোর্টার: ভোট দেবো বলে প্রার্থীদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে চুয়াডাঙ্গার অনেক মেম্বার চেয়ারম্যানেরই এখন তা বদহজম হচ্ছে। ভোটের পরদিন গতকাল জীবননগরের এক চেয়ারম্যানকে তো লোকজনের সামনেই লাঞ্ছিত করে টাকা ফেরত চেয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদপ্রার্থী। অপরদিকে আলমডাঙ্গায় গতকাল সারাদিনই ছিলো পরাজিত কয়েক প্রার্থীর টাকা আদায়ের তোড়জোড়। কেউ কেউ গতকালই টাকা ফেরত দিয়েছেন, কেউ কেউ নিয়েছেন সময়। এ বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু কি তাই? ভায়রা ভাই হয়েও ভোট না দেয়ায় কারো কারো পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠার খবর পাওয়া গেছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, জেলা নির্বাচনে প্রতারিত সদস্য প্রার্থীরা একজোট হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে টাকা আদায়ে পথে নেমেছেন। নির্বাচনের পরদিনই অনেকে চাপ দিয়ে ধান্দাবাজ মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে টাকা আদায় করছেন। অনেককে সময়ও বেঁধে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বিকেলে পরাজিত সদস্য প্রার্থী আলমডাঙ্গার বলরামপুরের জালাল উদ্দিন কালিদাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের ওপর চড়াও হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জালালকে সদস্য পদে ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে টাকা নিয়েছেন, সেই ৪২ হাজার টাকা ফেরত চান। শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরতের জন্য তিনি ২ দিন সময় চেয়ে নিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য। এছাড়া গতকালই পরাজিত প্রার্থী জালাল উদ্দিন কালিদাসপুর ইউপি সদস্য মানোয়ার হোসেন মনজু ও শ্যামলী খাতুনের নিকট থেকে ২০ হাজার করে টাকা ও ২টি শাড়ি ফেরত নিয়েছেন। পাইকপাড়া গ্রামের আয়ুব হোসেন মেম্বরের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছেন বাকি সদস্যদের  দু দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়া জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন। তিনি মোট ২৪ জনকে টাকা দিয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে বেলগাছি ইউনিয়নের এক পরাজিত প্রার্থী ওই ইউনিয়নের কয়েকজন মেম্বারের নিকট থেকে গতকাল দেড় লাখ টাকা আদায় করেছেন। বাকিদের একদিনের সময় দিয়েছেন। এদিকে অনুরূপ ঘটনার সংবাদ পাওয়া গিয়েছে কুমারী ও জামজামি ইউপিতেও। অনেক প্রতারক মেম্বার এখন টাকা ফেরত দেয়ার ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, সদ্য শেষ হওয়া চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে জীবননগর উপজেলায় সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য পদে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়া প্রার্থীরা টাকা আদায়ের অভিযানে নেমেছেন। টাকা দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিকট থেকে এ সকল প্রার্থীরা ভোট কিনেছিলেন; কিন্তু টাকা নিয়ে ভোট না দেয়ায় খেপেছেন পরাজিত সকল প্রার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল হতে টাকা অভিযানে নামে বেশ কয়েকজন প্রার্থী। এর মধ্যে অনেকে সফলও হয়েছেন। আদায় করেছেন টাকা। তবে এক ইউপি চেয়ারম্যান টাকা নিয়ে ভোট না দেয়ায় তাকে চপোটাঘাত খেতে হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের পরাজিত এক প্রার্থী নামের প্রথম অক্ষর ইংরেজি এম আদ্যাক্ষরের গালে গতকাল দুপুরে প্রকাশ্যে চপোটাঘাত করেন। এদিকে টাকা ফেরত দেয়ার ভয়ে বাঁকা ইউপির এক সদস্য সকালে দোকান বন্ধ করে পালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। শুধু টাকা নয় ফেরত চাওয়া হচ্ছে চাঁদর ও এমনিক জুতো স্যান্ডেলও। এমন ঘটনা গতকাল জীবননগরে সর্বমহলে ছিলো প্রধান আলোচনার বিষয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে জীবননগর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ছিলো ৯২। এ সকল ভোটারের অধিকাংশ চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের নিকট একাধিকবার হাজার হাজার টাকায় ভোট দেয়ার চুক্তিতে বিক্রি হয়েছেন। শুধু টাকা নয় মনোরঞ্জন করা থেকে শুরু করে দেয়া হয়েছে চাঁদার ও জুতো স্যান্ডেল। কিন্তু ভোটের পরে অধিকাংশ প্রার্থী দেখতে পান তাদের ঝুলিতে ভোট পড়েনি। ফলে তাদেরকে পরাজয় বরণ করতে হয়। পরাজিত এসকল সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে টাকা, চাঁদর, জুতো-স্যান্ডেল ফেরত নিতে অভিযানে নামেন। তবে যারা মনোরঞ্জরন করেছেন তাদেরকে গালি খেতে হচ্ছে। নামের প্রথম ইংরেজি এইচ ও আর আদ্যক্ষরের পরাজিত দুজন সদস্য প্রার্থী ও তাদের আত্মীয়স্বজনেরা দিনভর টাকা আদায়ের অভিযানে ছিলেন। অনেকে টাকা হজম করতে না পেরে ফেরতও দিয়েছেন। একাধিক প্রার্থীর নিকট থেকে টাকা নেয়া বাঁকা ইউপির এক সদস্য টাকা দেয়ার ভয়ে দোকান বন্ধ করে পালিয়েছে। সংরক্ষিত আসনের পরাজিত এক সদস্য ভোট না দেয়ার এক ইউপি চেয়ারম্যানের গালে চপোটাঘাত করে ৩০ হাজার টাকা ফেরত চেয়েছেন। এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে গিয়ে দিয়েছিলেন জুতো-স্যান্ডেল। ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী এ উপজেলাতে পেয়েছেন মাত্র ১ ভোট! এখন জুতো-স্যান্ডেল ফেরত চাওয়া হচ্ছে। এম মহিলা প্রার্থী টাকার পাশাপাশি চাঁদর দিয়ে ভোট কিনেছেলেন। তিনি ভোট পেয়েছেন অর্র্র্র্ধডজন। তিনি টাকার পাশাপাশি দেয়া চাঁদরও ফেরত চাচ্ছেন। পরাজিত প্রার্থীদের টাকা ও মালামাল আদায়ের এ ঘটনা গতকাল জীবননগরে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়। সেই সাথে নির্বাচন করতে গেলে ভোট কিনতে হাজার-হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে সেটিও আলোচনায় উঠে আসে।

Leave a comment