প্রাথমিকের বই নিয়ে শঙ্কা

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন বছরের আগমনী বার্তা দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়েছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির অর্ধকোটি শিক্ষার্থী জেনে যাবে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফল। শিশু-কিশোররা উত্তীর্ণ হয়ে নতুন শ্রেণিতে উঠবে। আর ১ জানুয়ারি খালি হাতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে, ফিরবে বিনামূল্যের পাঠ্যবই হাতে নিয়ে। প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে প্রস্তুত দুই মন্ত্রণালয়। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করবে। শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রচারে এগিয়ে থাকতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে দুই মন্ত্রণালয়। এই উৎসবে খরচের অঙ্ক নেহাত কম নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যপুস্তক উৎসবে খরচ করবে সাত লাখ টাকা। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই উৎসবে ব্যয় করবে ৩০ লাখ টাকা।

এদিকে দেশের অনেক জেলায় প্রাথমিকের বই পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের কিছু উপজেলায় প্রাথমিকে চার রঙের পাঠ্যবই পৌঁছেনি। ২০১৭ শিক্ষা বছরে প্রাথমিকে ১০ কোটি ৫২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২৭ কপি বই বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক দরপত্রে ভারতে ১ কোটি ৫২ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৭ কপি বই ছাপানো হয়েছে। জানা গেছে, যেসব জেলা ও উপজেলায় প্রাথমিকের বই পৌঁছেনি, সেখানে ভারতে ছাপানো বই দেয়ার কথা ছিল। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের কলকাতা, মুম্বাই ও পুনেতে প্রাথমিকের বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি চালান বাংলাদেশে এসেছে। তবে ২৫ লাখ বই এখনো ভারত থেকে আসেনি। এসব বই যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের কিছু উপজেলায় বিতরণের জন্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য ‘শিক্ষক গাইড’ বিনামূল্যে সরবরাহ করার কার্যাদেশ পেয়েছিল চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই বইগুলো বেশ কিছুদিন কলম্বো সমুদ্রবন্দরে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আটক ছিল যা, ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে পৌঁছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এ বই জাহাজ থেকে খালাশ হয়নি। এনসিটিবি জানায়, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য ‘শিক্ষক গাইড’ ছাপার আদেশ পেয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই প্রতিষ্ঠানটি ৪৬ লাখ বই এনসিটিবিকে হস্তান্তর করে।

আগামী ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মাধ্যমে স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণীর ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ২০১ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেয়া হবে। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হাতেও ব্রেইল বই তুলে দেবে সরকার। এ ছাড়া পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরাও আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নিজের মাতৃভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিক বই পাবে। এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যবই) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিক বলেন, সময় মতো বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে কোনো সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে বইয়ের বড় অংশ উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

পৃথকভাবে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালনে প্রতিযোগিতায় নেমেছে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ জানুয়ারি দুই মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে কমসূচি দিয়েছে। এর আগে দুই মন্ত্রণালয় একই সঙ্গে দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালন করত। রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল মাঠে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসব আয়োজন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে উৎসবে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত লাখ টাকা। ১০টি শিক্ষা বোর্ড, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই উৎসব আয়োজনে বরাদ্দ ৩০ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একসঙ্গে মিলে এই উৎসবের আয়োজন করে। দুই মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রতিবার প্রচার বঞ্চিত হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি ২০১৬ শিক্ষা বছরে মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই উৎসবের আয়োজন করে। কিন্তু একই দিনে দুই মন্ত্রণালয়ের আয়োজন থাকায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেশি প্রচার পেয়েছে। তিনি বলেন, এ জন্য ২০১৭ শিক্ষবর্ষের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব নিয়ে ব্যাপক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।