দায়িত্বশীলদেরই উদ্যোগী হতে হবে

 

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করাই শুধু নয়, একটি সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখতে হলে দ্রুত বিচার নিষ্পন্ন করার বিকল্প নেই। আমাদের সমাজে একটি ধারণা ইতোমধ্যে বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকেই আইনি সহায়তা নিতে চান না বরং ভুক্তভোগী হয়েও দুর্ভোগ মেনে নেন অথবা নিয়তির লিখন বলে ভাগ্যকে দোষারোপ করেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মানসিক স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করেন বটে তবে অপরাধ আরো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায় যা কোনো সমাজের জন্যই সুবার্তা নয়। দেশের বিভিন্ন আদালতে বিশেষ করে নি¤œ আদালতে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যানে এ ধরনের মামলার সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে তো বটেই তবে প্রধান বিচারপতি মনে করেন অকারণে সময় বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে এই দীর্ঘজট থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। তিনি জেলা জজদের আদালতে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে আরো আন্তরিক এবং পুরো সময়টাই বিচারকাজে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছেন। দুইদিনব্যাপী জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৬-এর সমাপনী দিনে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখ সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে কর্ম-অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা একজন বিচারপ্রার্থীর হতাশাই শুধু বৃদ্ধি করে না সেই সাথে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে এই ধরনের দুশ্চিন্তা একধরনের মানসিক অস্বস্তিরও জন্ম দেয়। এটি ব্যক্তি বা সমাজের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনা। আদালতে মামলার পাহাড় জমে যাওয়ার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন এর সাথে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই। কারণ কোনো কোনো জেলা জজ দুপুরের খাবারের পর আর বিচার কাজ চালান না এমন অভিযোগ বহু পুরোনো। কিন্তু এই সহজ বিষয়গুলোই এতোদিন কেউ আমলে নেননি বা নিতে চাননি। ফলে মামলার জট বেড়েছে। এছাড়া সব মামলার ধরন একই রকম নয়। সেক্ষেত্রে একজন বিচারক কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে বাড়তি সময় না দিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে মামলার জটও কমে এবং বিচারপ্রার্থীরাও আস্থা স্থাপনে আগ্রহী হতে পারেন। বিচারপ্রার্থনার ক্ষেত্রে জনমনে আস্থার সঙ্কট তৈরি হওয়া সব সমাজের জন্যই অশনিসঙ্কেত। এতে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বাড়ার শঙ্কা যেমন এড়িয়ে যাওয়া যায় না তেমনি সামাজিক অপরাধও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে। এমন যাতে না হয় সে ব্যাপারে দায়িত্বশীলদেরই উদ্যোগী হতে হবে। বিচারকরা আমাদের সমাজের অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা জনগণের সহায়ক হবেন এটিই সবার প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিলে তা বিচারিক ব্যবস্থায় নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।