মহেশপুরে মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত

 

নাজিম উদ্দিনের পরিবার আজও শহীদ পরিবারের মর্যাদা পায়নি

মহেশপুর প্রতিনিধি: মহেশপুরে মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত নাজিম উদ্দিনের পরিবার আজও শহীদ পরিবারের মর্যাদা পায়নি। মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারটি।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, মহেশপুর হামিদপুর ক্যাম্প পাড়ার পরেশ মণ্ডলের ছেলে নাজিম উদ্দিন ছিলেন মোজাহিদ বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন সদস্য। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। তিনি চৌগাছা উপজেলায় পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়ে মহেশপুর ফিরে আসেন। এ সময় তার শিশু পুত্র ওয়াজেদ আলীর বয়স ৭ মাস। স্ত্রী রুপভান বেগম শিশু পুত্রকে নিয়ে পিতার বাড়ি যোগিহুদা গ্রামে অবস্থান করছিলেন। ওয়াজেদ ওই সময় অসুস্থ থাকায় পুত্রের জন্য ওষুধ নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায় নাজিম উদ্দিন। বিষয়টি স্থানীয় রাজাকাররা জেনে যায়। ওই রাতে মহেশপুর হাসপাতালে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প থেকে রাজাকার ও পাকিস্তনী বাহিনীরা যোগিহুদা গ্রাম থেকে নাজিম উদ্দিন ও তার শ্বশুর হাশমত আলীকে অস্ত্রসহ আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। ক্যাম্পে তাদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করে আটকের ৩ দিন পর হাশমত আলীকে এবং ১ সপ্তাহ পর নাজিম উদ্দিনকে হত্যা করে বধ্যভূমিতে ফেলে দেয়।

স্থানীয়রা জানায়, নাজিম উদ্দিনকে বেনেট দিয়ে আহত করে জীব গাড়ির পেছনে বেঁধে টেনে-হেঁছড়ে নিয়ে বেড়িয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। নাজিম উদ্দিন ওই সময় ৩ সন্তানের জনক ছিলেন। এরা হলেন- তোতা মিয়া, ওয়াজেদ আলী ও চাঁদ বানু (মৃত)। বর্তমানে এরা মানবেতন জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘ ৪৬ বছর পার হলেও নাজিম উদ্দিন পায়নি শহীদের মর্যাদা, সন্তানরা পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। বড় ছেলে সাবেক কমিশনার তোতা মিয়া শহীদ পরিবারের মর্যাদা পাওয়ার আশায় বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিলেও আজ পর্যন্ত কোনো ফল পায়নি।

বর্তমান পৌর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী আব্দুস সাত্তার জানান, নাজিম উদ্দিন একজন মোজাহিদ বাহিনীর ট্রেনিংপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন। যুদ্ধে অংশ নেয়ার পর যোগিহুদা গ্রাম থেকে তাকে ধরে এনে হানাদার বাহিনী  নির্মমভাবে হত্যা করে এটা আমি জানি। শহীদ পরিবারের মর্যাদা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মালেক গাজী বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কেউ যাতে বাদ না পড়ে সে বিষয়ে ফেব্রুয়ারি ১৭ মাসে যাচাই-বাছাই কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে আবেদন থাকলে তিনি দেখবেন বলে জানান। নাজিম উদ্দিনের পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন।