প্রসঙ্গ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন এবং মারামারি

সংঘর্ষ হানাহানি মারামারি যে সব সময়ই উভয়পক্ষের উগ্রতা বা একপক্ষ অপরপক্ষকে মেনে নিতে না পারার কারণে হয়, তা কিন্তু নয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েও অনেক সময় আত্মরক্ষার্থে লাঠি ধরতে হয়। যদিও নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার অধিকার আইন দেয়নি। এরপরও ঘটনা যখন ঘটেই যায়, তখন আইনের দৃষ্টিতেই ন্যায়-অন্যায় দেখে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কলাগাছি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে দু পক্ষের সংঘর্ষের সূত্রপাতেও ন্যায়-অন্যায় থাকা অমূলক নয়।
চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চল কলাগাছি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে শুরু করে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি শ্রেণি। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বিদ্যালয়ে সব’কটি শ্রেণির মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ২৮ জন। শিক্ষক? তিনজন। এতেই স্পষ্ট ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনের হাল। যে বিদ্যালয়ের এই বেহালদশা, সেই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ ৬ মাস আগে উত্তীর্ণ হওয়াটা কতোটুকুই আর দোষের? দোষ তখনই যখন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি আবারও সভাপতি হওয়ার খায়েশ প্রকাশ করেন। তারই সূত্রপাত ধরে ঘটে মারামারি, হামলার ঘটনা। সংঘর্ষে নারীসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হওয়ার খবরে সঙ্গত কয়েকটি প্রশ্ন- কেন একজনকে বার বার সভাপতি থাকতে হবে? ভালো কাজ করেছেন বলে? নাকি অভিজ্ঞতার আলোকে দক্ষ? তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দু দফা। বিদ্যালয়ের দশা দেখে বোদ্ধাদের নিশ্চয় বুঝতে বাকি নেই এসএমসি সভাপতি হিসেবে তিনি কতোটা দায়িত্বশীল, কতোটা দক্ষ। বিদ্যালয়ের বেহাল পরিস্থিতি দেখে গ্রামের শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে পরিবর্তনের তাগিদ আসতেই পারে। সেই তাগিদের প্রতি সম্মান দেখানোটাই কি  মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপাতি ও তার সমর্থকদের জন্য সম্মানজনক হতো না? হতো। কিন্তু ক’জনই আর সেপথে হাঁটে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার রেওয়াজ সমাজের সর্বত্রে তথা রন্ধ্রে রন্ধ্রে গেড়ে বসেছে।
অবশ্যই কলাগাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জীর্ণদশা দূর করতে হবে। শিক্ষক সংকট যেমন কাটাতে হবে, তেমনই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থী না পাওয়া গেলে নিকটস্থ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর করার বিষয়টি ভাবতে হবে। উদাসীনতা অনিয়মকে উসকে দেয়। ন্যায়-অন্যায়ের সংঘাত অনিবার্য  হয়ে ওঠে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ফর্দ বাড়তেই থাকে। পুলিশের বিচক্ষণতায় প্রকৃত দোষীর অপরাধের মাত্রানুপাতে বিচারের মুখোমুখি করতে পারলে আইনের প্রতি আস্থা বাড়ে। সমাজ সেটাই প্রত্যাশা করে।