ঝিনাইদহ গণপূর্তের বেদখলে থাকা জমি দখল শুরু : কোথায় যাবে অসহায় গোলে বুড়ি

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: স্বামী মুনছুর আলীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ঝিনাইদহের গুলনাহার ওরফে গোলে বুড়ির আশ্রয় হারা হয়ে পড়েন। তিন সন্তান নিয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বেজপাড়া গ্রামে। সেখানেও তার থাকার কোনো জায়গা হয়নি। শেষে ওই গ্রামের এক পাশে জঙ্গলে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের পতিত জায়গা পরিষ্কার করে সেখানে টিনের চাল তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর সেখানেই বসবাস করছেন গোলে বুড়ির পরিবার। তার সন্তানেরাও পরিবার পরিজন নিয়ে এখানেই আছেন।  গোলে বুড়িই মতো আরও ৭ জন বিধবা থাকেন এই জায়গায়। যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। সম্প্রতি গণপূর্ত বিভাগ ওই স্থানটি ঘিরে দিয়েছে। চলে যেতে বলা হয়েছে ওই স্থানের বসবাসকারীদের। এতে অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে কান্নাকাটি শুরু হয়ে  গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উঠিয়ে দেয়া অমানবিক হবে। কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই এদের উচ্ছেদ করা হলে এরা যাবেন কোথায়? ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া মৌজায় গণপূর্ত বিভাগের ৬ একর ৯০ শতক জমি রয়েছে। যেখানে  বেশ কিছু অসহায় পরিবার ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। কিছু জায়গায় কলা-কচুর চাষ হচ্ছে, আর কিছু জায়গা পড়ে আছে।

গণপূর্ণ বিভাগ ঝিনাইদহ অফিসসূত্রে জানা গেছে, ১৯৫২ সালে এখানে ইট তৈরির জন্য ভাটা প্রস্তুত করা হয়। সেই সময়ে এলাকায় কিছু ভবন নির্মাণের জন্য ইটের প্রয়োজন হয়। এই ইট তৈরির কাজ শেষে জমিটি পতিত হয়ে যায়। বজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনিচুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে জমি যখন অধিগ্রহণ করে তখন বলা হয়েছিলো প্রয়াজন শেষে আবার ফেরত দেয়া হবে। ৪ থেকে ৫ বছর এই জমি তারা ব্যবহার করবে, এরপর স্ব-স্ব মালিক ফেরত পাবেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জমির মালিকরা চেষ্টা করেও আর ফেরত দেয়া হয়নি। পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থেকেছে। এদিকে গ্রামের মানুষ তাদের দেয়া জমি ফেরত না পেয়ে বিকল্প পথ বেছে নেন। পড়ে থাকা জমির কিছু অংশ গ্রামের মানুষ সম্মিলিতভাবে চাষ করে  সেখানে উৎপাদিত ফসল বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্যন করে গ্রামের সেই অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠার গড়ে তোলেন।

আনিচুর রহমান আরও জানান, জায়গা পতিত হয়ে পড়ে থাকায় সেখানে জঙ্গলে ভরে গিয়েছিলো। গ্রামের লোকজন স্কুলের প্রয়োজনে কিছুটা পরিষ্কার করে চাষাবাদ করেন। বাকি জমিতে কিছু অসহায় মানুষ বসবাস শুরু করেন। সর্বপ্রথম গোলে বুড়ি এই স্থানে বসবাস শুরু করেন। আস্তে আস্তে অনেক অসহায় পরিবার এই স্থানটি বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছেন। তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।