আলমডাঙ্গার কাবিলনগরের হত্যাকা-ের শিকার কিশোর সলোকের পিতা বাড়ি ফিরেছেন

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার কাবিলনগরের হত্যাকা-ের শিকার কিশোর সলোকের পিতা বাড়ি ফিরেছেন। ছেলের হত্যা মামলার আসামিদের শায়েস্তা করতে নিজেই গা ঢাকা দিয়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজির নাটক সাজিয়েছিলেন তিনি। আলমডাঙ্গা উপজেলার কাবিলনগর গ্রামের ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দীন জানান, গতকাল সোমবার ভোরবেলা শামসুল ইসলামের মামা একই গ্রামের মৃত কসের আলীর ছেলে আফিজ উদ্দীন উপস্থিত হয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তিনি জানান, তার ভাগ্নে শামসুল ইসলাম তাদের বাড়িতে এসে উঠেছেন। এখন ঘুমাচ্ছেন। বিষয়টি গ্রামের মেম্বার হিসেবে তাকে জানিয়ে রাখছেন। একথা শোনার পর পরই মেম্বারম বেড থেকে উঠে জলদি ছুটে যান আফিজ উদ্দীনের বাড়িতে। দেখেন সত্যি সত্যি শামসুল শুয়ে আছে লেপের মধ্যে। কী ব্যাপার জিজ্ঞেস করতেই সবিস্তারে শামসুল ইসলাম সব খুলে বলা শুরু করেন। শামসুল জানান, ওই দিন কোর্ট থেকে তাকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। একটি গোডাউনে তাকে ও তার প্রতিবেশী সাঈদকে আটকে রেখেছিলো। রাতে রায়সা গ্রামের বাদেনঘাটা মাঠে ছেড়ে দিয়ে গেছে। প্রথমে কাবিলনগর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলীর বাড়ি উঠেন। সেখান থেকে ভাগ্নের বাড়ি উঠে ঘুমাচ্ছেন।  এ কাহিনি শোনার পর মেম্বার আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে মোবাইলফোনে বিষয়টি অবহিত করেন। থানা অফিসার ইনচার্জ শামসুল ইসলামকে ধরে দ্রুত থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তাকে দ্রুত থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শামসুলকে নিয়ে যাওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা ডিবি অফিসে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে আবার আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শামসুল ইসলাম পুলিশের নিকট অপহরণ নাটকের আদ্যপান্ত খুলে বলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ছেলের হত্যাকারীদের শায়েস্তা করতেই তিনি সাঈদের পরামর্শে এ অপহরণ নাটক সাজান। তারা দুজন দামুড়হুদা উপজেলার কাড়ালগাছি গ্রামে অবস্থিত সাঈদের ধর্মপিতার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখানে বসেই অপহরণ নাটক সাজিয়ে শামসুল ইসলাম তার স্ত্রীকে রিং দিয়ে অপহরণ ও চাঁদাদাবির মিথ্যা গল্প বলেন।

উল্লেখ্য, কাবিলনগরের হত্যাকা-ের শিকার কিশোর সলোকের পিতা চুয়াডাঙ্গা আদালতে যাওয়ার উদ্দেশে গত ১১ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হন। ইতঃপূর্বে সলোক হত্যা মামলার ধৃত আসামি কর্তৃক আদালতে ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছিলো, সেই জবানবন্দিতে সলোক হত্যাকা-ে যারা জড়িত তাদের নাম উল্লেখ ছিলো। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে। সম্প্রতি সিআইডি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে উল্লেখকৃত আসামির নাম বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেছে। সেই চার্জশিটের বিরুদ্ধে না রাজি জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আজ ২০ ডিসেম্বর ছিলো ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে না রাজি জানানোর নির্ধারিত তারিখ। আদালতের মহুরীর কথামত তিনি আদালতে যাওয়ার জন্য ওই দিন বাড়ি  থেকে বের হয়েছিলেন। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরিবার ধারণা করছিলো শামসুল হককে ঘাতকচক্র তার ছেলে সলোকের মতো অপহরণ করা হয়েছে। যাতে তিনি আদালতে না রাজি জানাতে না পারেন। এ ঘটনায় শামসুলের স্ত্রী নিগারুন খাতুন আলমডাঙ্গা থানায় গত ১৭ ডিসেম্বর ১৫ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ শামসুলের মোবাইলফোন থেকে তার স্ত্রীর নিকট রিং করে শামসুল নিজেই তার অপহরণের কথা নিশ্চিত করে জানায়, ৩ লাখ টাকা আর ছেলে হত্যা মামলা তুলে না নিলে অপহরণকারীরা তাকেও হত্যা করবে। তাকে চুয়াডাঙ্গা কোর্ট থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অপহরণ করেছে। শামসুলের স্ত্রী পুলিশকে এ ঘটনা জানালে প্রশাসন মরিয়া হয়ে উঠে শামসুলকে উদ্ধার করতে। ইতোমধ্যেই পুলিশ ওই মামলার আসামি কাবিলনগর গ্রামের মনসের আলীর  ছেলে ছমির আলী, মৃত মুলুক ম-লের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, ইয়াকুবের ছেলে রফি উদ্দীন ও তিয়রবিলা গ্রামের মৃত গোলাম লস্করের ছেলে শফি লস্কর এবং মৃত নিসার উদ্দীনের ছেলে আতিয়ারকে আটক করে সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালতে প্রেরণ করে। এরই এক পর্যায়ে সে নিজেই বাড়ি ফিরে অপহরণ ও চাঁদাদাবি নাটকের যবনিকাপাত ঘটান।